শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতিঃ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিতঃ নদী ভাঙন বৃদ্ধি

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতিঃ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিতঃ নদী ভাঙন বৃদ্ধি

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় গতকাল সোমবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৮ সে.মি. ও ঘাঘট নদীর পানি নতুন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও মারাত্মক অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙনও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দী লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও গরু-ছাগল নিয়ে নৌকায় করে আসবাবপত্র নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুলছড়ি ইউনিয়নের জামিরা ও নামাপাড়া গ্রামের ৫৭টি, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ি, আলগারচর, ভাটিয়াপাড়া, পূর্ব হরিচন্ডি, পাগলারচর, তিনথোপা গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ৮৫টি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। এদিকে আকস্মিক বন্যায় বালাসীঘাটের দক্ষিণ পার্শ্বে ফুলছড়ি উপজেলার রসুলপুর ও কাইয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ টাকা ও ৬০ মে. টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। তার মধ্যে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে বিতরণের জন্য ৪ উপজেলায় ২ লাখ টাকা এবং ৪০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসক গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। বাঁধগুলো যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে বহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও ঘাঘট শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে গ্রাম পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবীদের সার্বক্ষনিক তদারকিতে নিয়োগ করা হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধিঃ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গোবিন্দগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। গত ৩ দিনে ১৫টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পারধুন্দিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর ভাঙ্গনে গত ৩ দিনে পার ধুন্দিয়া গ্রামের ১৫ টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ওই গ্রামের ফুল মিয়া, লাল মিয়া, শাহারুল ইসলাম, সাহেব মিয়া, ওমর আলী, মনজু মিয়া, চান মিয়া, মশিউর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল কাদেরসহ ১৫টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজন কেউ বাঁধে, কেউ বা আবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
এ ব্যাপরে হরিরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী সাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসে দাখিল করা হয়েছে- তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ওই গ্রামটি সম্পূর্ন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ বর্মন বলেন, নদীগর্ভে হরিরামপুর ইউনিয়নের পার ধুন্দিয়া গ্রামে নদী ভাঙ্গনে ১২/১৪টি পরিবারের ঘর-বাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ ওই পরিবার গুলোকে স্থানীয় গুচ্ছগ্রামে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তালিকা চুড়ান্ত করে সরকারী ভাবে সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com