শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে গত একমাসে পর পর দু’দফায় বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদী তীরবর্তী নিচু এলাকাসহ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় থাকায় তারা চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ইতোমধ্যে যারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ও বিভিন্ন এলাকায় গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে তারা ঘরে ফিরতে পারছে না। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ায় তারা চরম বিপাকে পড়েছে। এদিকে সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও সদর উপজেলার ১৯টি পয়েন্টে ব্যাপক নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধসহ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৫২টি পয়েন্ট এখন ভাঙন কবলিত হওয়ায় চরম হুমকির মুখে রয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাঁধ ভেঙে জেলায় বন্যায় চরম বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল রোববার ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সে.মি. ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৭৫ সে.মি. এবং করতোয়া নদীর পানি এসময় ৬ সে.মি. কমে এখন বিপদসীমার ৩২ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তা নদীর পানিও এসময় ১ সে.মি. কমেছে।
গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধিঃ গোবিন্দগঞ্জে গত শনিবার রাতে বাঙ্গালী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে ৩টি ইউনিয়নের ১৫/২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসিনতায় দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় এ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
বাঙ্গালী নদীর মূল করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ৫ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে বাঙ্গালী নদীর বোঁচাদহ গ্রামের উত্তর পাড়া কামাল মেম্বরের বাড়ির পাশে বাঁধ ১০০ মিটার ভেঙ্গে যায়। এতে উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বোচাদহ, বালুয়া, ছয়ঘরিয়া, শ্রীপতিপুর, কুমিড়াডাঙ্গা, পুনতাইরের একাংশ, পাছপাড়া, গোপালপুর, জিরাই, পাশ্ববর্তী রাখালবুরুজ ইউনিয়নের সোনাইডাঙ্গা. হারনাথপুর- বিশপুকুরম, কাজিরচক, পচারিয়া, মাদারদহ, কাজিপাড়া, ফকির পাড়া ও পানিয়াসহ শিবপুর এবং কোচাশহর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া বোচাদহ এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এনসি এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু তারা কাজ শুরু করতে দেরি করার কারণে ঝুঁকিতে থাকা বোচাদহ বাঁধ গত রাতে ভেঙ্গে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামকৃষ্ণ বর্মন বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঠিকাদার দ্রুত বাঁধের মেরামত কাজ শুরু না করায় এ বাঁধ ভেঙ্গে গেছে – তবে বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দ্রুত মেরামত করতে কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
উপজেলা কৃষি অফিসার খালেদুর রহমান জানান, বন্যায় ৪০ হেক্টর বীজতলা, ৩০ হেক্টর আউস ধান, ২০ হেক্টর রোপা আমন, ১০ হেক্টর কলা ও ৪০ হেক্টর শাক সবজির ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য অফিসার ইমরান হোসেন চৌধুরী জানান, ৮.৬২ হেক্টর পুকুর বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় উপজেলায় প্রায় ২ হাজর পরিবার পানিবন্দি রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য ১০ মেঃটন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা সরকারী ভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে।