সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ কাঁচা দুধ কিনে স্বল্প তাপে ফুটিয়ে কয়েকদিন রেখে দিলে প্রাকৃতিক ভাবেই তৈরি হতো টক দই। মিষ্টি দই বাজারে আসার আগে ভোজন রসিক গাইবান্ধাবাসীর খাদ্য তালিকায় একসময় প্রিয় অনুষঙ্গ হিসেবে ছিল টক দই। চৈত্র থেকে আশ্বিনের ভ্যাপসা গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে টক দইয়ের চাহিদা ছিল ব্যাপক। টক দই তৈরিতে তাই গোয়ালাদের বাড়িতে কর্মব্যস্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো।
নতুন প্রজন্মের কাছে এই গোয়ালা পেশাটি নতুন মনে হলেও তিন থেকে চার দশক আগে পেশাটি ছিল সমৃদ্ধ। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাজারে ভিন্ন স্বাদের দই আসায় কমে গেছে টক দইয়ের চাহিদা। বিক্রি কমে যাওয়াসহ বাজারে দুধের দাম বেশি থাকায় অনেক গোয়ালা এখন পেশা পরিবর্তন করলেও শতবর্ষ পুরনো এই পেশা ধরে রেখেছেন পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাবাড়ী এলাকার গোয়ালা আশরাফ আলী। ৬০বছর বয়সে বাঁকা কাঁধের উপর ভর করে তিনি এখনও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে টক দই বিক্রি করছেন।
তিনি জানান, টক দই তৈরি তাদের পারিবারিক ব্যবসা। টক দইয়ের সুদিনের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা সময় দিনে শত শত লিটার দুধ থেকে টক দই তৈরি করা হতো। প্রতিদিন ভোরে পাইকাররা আমাদের বাড়িতে এসে টক দই নিয়ে বিক্রির জন্য বিভিন্ন এলাকায় ঘুরত।
দিনশেষে সবার খুব ভালো আয় হতো কিন্তু এগুলো এখন অতীত। আমার পাড়ায় একসময় অর্ধ শতাধিক মানুষ এই পেশায় নিয়োজিত থাকলে এখন কেবল দুই তিন জন মানুষ টক দই তৈরি করছে। নতুন করে এই পেশায় কেউ আসতে চাইছে না। জিনিসপত্রের দাম বেশি তাই সব মিলিয়ে লাভ অনেক কম।
এসময় তিনি আরও বলেন, ১ লিটার টক দই বিক্রি হয় ৮০ টাকায় আর দই তৈরির প্রধান কাঁচামাল দুধের প্রতি লিটার এখন ৭০ টাকা। এর মধ্যে আরো কিছু খরচ যোগ করলে আমাদের আর কোন লাভ থাকে না। তাই আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
এদিকে ভোজন রসিক গ্রামের অনেক মানুষ টক দইয়ের চাহিদা অনুভব করে। আশরাফ আলীর কাছ থেকে টক দই কিনতে আসা, গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আরিফ খা গ্রামের নাসির উদ্দিন বলেন, টক দই অনেক সুস্বাদু একটি খাবার।
আমরা ছোট থেকেই এই খাবার খেয়ে আসছি। এখন আর আগের মতো গোয়ালারা টক দই বিক্রি করতে আসে না। আগে যেখানে কয়েক দিন পর পর আসত এখন সেখানে দুই তিন মাসেও তাদের দেখা মিলে না তাই দেখা পেলেই টক দই কিনি।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানেও দুধের পাশাপাশি টক দইয়ের উপকারিতা রয়েছে। চিকিৎসকদের মতে একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম টক দই গ্রহণ করা উচিত। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক। নারীদের টক দই বেশি প্রয়োজন। নারীদেহে ক্যালসিয়ামের অভাবে থাকে বেশি।
গাইবান্ধা এস কে এস হাসপাতালের পুষ্টি ও ডায়েটিশিয়ান বিশেষজ্ঞ মাহফুজা আক্তার মুন্নী বলেন, টক দইয়ে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট আছে। এছাড়াও ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম থাকায় টক দই থেকে দুধের সমপরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায়। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত উপকারী, এটা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।