শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধার মাটির খেলনার গ্রামঃ জীবন-জীবিকার তাগিদে খেলনা তৈরি যাদের পেশা

গাইবান্ধার মাটির খেলনার গ্রামঃ জীবন-জীবিকার তাগিদে খেলনা তৈরি যাদের পেশা

স্টাফ রিপোর্টারঃ বাঙ্গালির নিজস্ব কৃষ্টি ও গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে চারু, কারু ও মৃৎ শিল্প। এই মৃৎ শিল্পের সাথে জীবন জীবিকাকে জড়িয়ে এখনও গাইবান্ধার বিভিন্ন অঞ্চলে বিরুদ্ধ পরিবেশেও নিজ পেশাকে আঁকড়ে টিকে আছে কতিপয় কুম্ভকার পরিবার। এখন মাটিসহ নানা জিনিষের খেলনা তৈরি করে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এসব মৃৎ শিল্পীরা বংশ পরস্পরায় তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। বিশেষ করে করোনার কারণে গত বছর বিভিন্ন মেলা না হওয়ায় কুম্ভকাররা খেলনা তৈরী বন্ধ রাখে। কিন্তু এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গা পূজা উপলক্ষে মেলা বসায় কুম্ভকাররা খেলনা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার পালপাড়া, শিবপুর, কলাকোপা, ধুতিচোরা, ফুলছড়ির রসুলপুর, কঞ্চিপাড়া, ভাষারপাড়া, সাঘাটার ঝাড়াবর্ষা, পুটিমারী, সুন্দরগঞ্জের বেলকা, পাঁচপীর, ধুবনী, চন্ডিপুর, কঞ্চিবাড়ী, শ্রীপুর, ধর্মপুর, সাদুল্যাপুরের রসুলপুর, দামোদরপুর, পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, আরজিশাহপুর ও শক্তিপুর এবং পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ী গ্রাম এখনও এ জেলার মাটির খেলনার গ্রাম হিসেবে পরিচিত অর্জন করে আসছে। এসব গ্রামের সাড়ে ৭শ’ পরিবার এখনও মৃৎশিল্প ও নানা খেলনা তৈরীর কাজে নিয়োজিত রয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্বেও তারা এখনও তারা এই পৈত্রিক পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। বিভিন্ন আকর্ষণীয় আকারে মাটি দিয়ে তৈরি এবং চারু ও কারু পণ্যের পাশাপাশি শোলা, বাঁশ, কাঠ, লোহা, বেত ও তালপাতার তৈরি নানা খেলনা তৈরিতে ইতোমধ্যে তারা দক্ষতা অর্জন করেছে। এছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে মাটির তৈরী বর্ণালী নানা খেলনা, পুতুল, শোলার তৈরী ফুল ও পশুপাখি, মাটি আর মৃত পশুর পেটের চামড়ায় তৈরী ঢোলগাড়ী, বাঁশের বাশি, তালপাতার ক্যাচ্ ক্যাচি পাখি, কাগজের বাহারী ফুল, লৌহ নির্মিত বিভিন্ন সামগ্রীসহ অনেক কিছু।
মূলত: বিভিন্ন সময়ে গ্রামীণ যে মেলাগুলো হয়ে থাকে সেসব মেলাতেই এসব খেলনা বেচা কেনা হয় সব চাইতে বেশি। সে কারণে তাদের পণ্যের বেচা কেনার ভরা মৌসুম হচ্ছে ফাল্গুন-জ্যৈষ্ঠ ৪ মাস এবং আশ্বিন, অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ এই ৪ মাস। অন্য সময়ে এসব জিনিষের চাহিদা কম থাকে বলে এ সময় তারা পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত থাকে বেশি। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের পালপাড়ার ঢোলগাড়ী, তালপাতা ও শোলার ক্যাচ্ ক্যাচি পাখির কারিগর শৈলেশ চন্দ্র পাল ও মঞ্জুরানী পাল জানালেন, বর্ষা মৌসুমে বান-বন্যার সময়টিতে এসব জিনিষ তৈরী করাও সম্ভব হয় না বলে মৌসুমে অনেক আগেই খেলনা বানিয়ে মজুত করে রাখতে হয়। কিন্তু দরিদ্র এই খেলনার কারিগররা অর্থাভাবে চাহিদা মোতাবেক পণ্য মজুত করে রাখতে পারে না বলেই তারা তাদের চিরায়ত অভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না। একই কারণে রং, শোলা, চামড়াসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে না পারায় তারা উন্নতমানের খেলনা তৈরী করতে পারছে না বলে জানালেন সুন্দরগঞ্জ সীচা গ্রামের মৃৎশিল্পী মঙ্গল চন্দ্র পাল ও কৃষ্ণারানী পাল।
পলাশবাড়ীর হিজলগাড়ীর মাটির খেলনার কারিগর মাধবী পাল, মনোরঞ্জন পাল, খেলনা তৈরি ও রং দেয়ায় তাদের উন্নত প্রযুক্তি এবং রং ব্যবহারের কৌশল বিষয়ে সরকারী উদ্যোগে প্রশিক্ষিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এতে তারা মাটি, শোলা, বাঁশ, বেত দিয়ে অনেক উন্নতমানের এবং আকর্ষণীয় খেলনা তৈরী করতে পারতেন। এতে যেমন গ্রামীণ এই আদি শিল্পকর্মটি এবং তাদের কারিগররা স্বকীয় বৈশিষ্টে জীবন জীবিকায় টিকে থাকতে পারতো।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com