শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধার বিএডিসির গাফিলতিতে সেচ অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ

গাইবান্ধার বিএডিসির গাফিলতিতে সেচ অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ

স্টাফ রিপোর্টারঃ বোরো ধান চাষের উৎকৃষ্ট সময় পার হলেও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) জমিতে পানি সরবরাহে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এতে গাইবান্ধায় সেচ অনিশ্চয়তায় পড়েছে ৩০০ বিঘা জমির চাষাবাদ। এনিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধা-৩ আসনের সাংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির কাছে চিঠিও দিয়েছেন কৃষকরা। কিন্তু তারা কোনো প্রতিকার পাননি।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসির কর্মকর্তাকে চাহিদামত ঘুষ না দেওয়ায় বসানো হচ্ছে না সেচ মেশিন। এঅবস্থায় নদী ভাঙন ও অবহেলিত এই এলাকার অন্তত ২০০ কৃষক পরিবারের ক্ষতির মধ্যে পরবেন। যার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে সাদুল্লাপুরের দামোদরপুর ইউনিয়নের উত্তর দামোদরপুর এলাকার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুরন্নবী সরকারের জমিতে স্থাপন করা হয় বিএডিসির ডিজেল ইঞ্জিন চালিত একটি গভীর নলকূপ (সেচ পাম্প)। পরবর্তীতে একটি দুর্ঘটনায় ইঞ্জিনটি নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে শ্যালো মেশিনে অনেক কষ্টে চাষাবাদ করে আসছেন কৃষকরা। এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষিতে ব্যাপক আধুনিকায়ন হয়ে কৃষি চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
গভীর নলকূপটি (সেচ পাম্প) আবারো চালু করতে দফায় দফায় গাইবান্ধার বিএডিসি কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও কোনো কথা শোনেননি বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। পরে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে কৃষকদের স্বার্থে বন্ধ থাকা গভীর নলকূপটি বিদ্যুতের সাহায্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন (বিএমডিএ) মাধ্যমে চালু করতে জেলা প্রশাসকের কাছে কৃষকদের পক্ষে লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনটি করেন একই এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক নুরুন্নবী সরকার। এছাড়াও বিষয়টি অবগত হয়ে কৃষকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি চিঠি দেন সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ি আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির কাছেও।
আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার জান্নাতুল ফেরদৌসি উর্মি স্বাক্ষরিত একটি পত্রে নির্দেশ করা হয়। কিন্তু নলকূপটি বিএমডিএ চালু করার কথা জানতে পেরে বিএডিসি নলকূপটি তাদের দাবি করে এবং তারাই নতুন করে চালু করবে বলে জানায়। পরে আবেদনকারী, বিএমডিএ ও বিএডিসিকে নিয়ে জরুরী বৈঠক করে তিন দিনের মধ্যে বিএডিসিকে নলকূপ চালু করতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। অথচ সেই নির্দেশনার তিন সপ্তাহ পার হলেও বিএডিসি পানি সরবরাহে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই এলাকার অন্তত শতধিক বিঘা জমি পানির অভাবে এখনও অনাবাদি পড়ে আছে। বয়স হওয়ায় পঁচে-নষ্ট হচ্ছে চারাগাছ (বেছন)। স্বচ্ছল পরিবারগুলোর কেউ কেউ চাষের মৌসুম পার হওয়া আর চারাগাছ নষ্টের হাত থেকে রক্ষায় শ্যালো মেশিন থেকে বেশি দামে ঘণ্টা হিসেবে পানি নিয়ে জমি চাষা করছেন। কেউ কেউ পানি দিচ্ছেন নালা থেকে। এছাড়া আশেপাশের কৃষকরা চড়া দামে ডিজেল কিনে শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপটি চালু করা হলে অন্তত ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমিতে পানি সরবরাহ করে ২০০ থেকে ২৫০টি কৃষক পরিবারের চাষাবাদের খরচ অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল।
কৃষক নুরুন্নবী আকন্দ অভিযোগ করে বলেন, বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুতের নলকূপ বসাতে প্রথমে দেড় লাখ ও পরে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। কর্মকর্তার চাহিদামত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এলাকায় মেশিন নিয়ে আসার পরেও বসানো হচ্ছে না। উপরন্তু বিভিন্ন তালবাহানায় মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ফেরত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, আমরা বাঁধা দিয়েছি।
তিনি আরোও বলেন, এই এলাকার চাষাবাদের বড় মৌসুম ইরি-বোরো। আর সেই সময়ে চাষাবাদ না করতে পারলে না খেয়ে থাকতে হবে কৃষকদের। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুত চালিত গভীর নলকূপটি চালু করে কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার দাবি জানাই।
দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্ধ থাকা নলকূপটি চালু করতে এলাকার কৃষকরা অনেকবার বিএডিসির দারস্ত হয়েছে। তাতে কোনো সাড়া না পাওয়ায় আমাদের এলাকার এমপি ও ডিসির কাছে গেছি। কৃষকদের স্বার্থে নলকূপটি চালু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীর গাফিলতির কারণে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি ডাবল খরচ করে ইরিগেশন করতে হচ্ছে। এখনও প্রায় ১০০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এসবের সব দায় বিএডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীকেই নিতে হবে। আশা করি দ্রুত পানি সরবাহের ব্যবস্থা করে প্রান্তিক কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করবে বিএডিসি।
গাইবান্ধা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, কৃষকরা চাচ্ছেন বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ। বিদ্যুতের বিষয়টিতে কয়েকটি দপ্তর সংশ্লিষ্ট রয়েছে। সেটি প্রক্রিয়াধীন, তাতে সময় লাগবে। কেউ চাইলেই গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। ২৫ বছর আগে ওখানে নলকূপ ছিল। এই ব্যবধানে নিয়ম-কাকুন, অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পরেই সেখানে ডিজেল চালিত মেশিন চালু করে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা তাতে রাজি নন। আর আমি কেন তাদের কাছে দেড় লাখ টাকা ঘুষ চাইব? এটা মিথ্যা কথা।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com