বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৫ অপরাহ্ন

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের পরিবহন টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী

গাইবান্ধার চরাঞ্চলের পরিবহন টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী

স্টাফ রিপোর্টারঃ তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে শুকনো মৌসুমে নদ নদীর পানি কমতে শুরু করলে নদীর মাঝে মাঝেই ধু ধু বালুর চর পড়তে শুরু করে। এ সময় জেলার নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১শ’ ২০টি চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াত ও কৃষি পণ্যসহ প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। চরাঞ্চলের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে এ অঞ্চলে একটি কথা প্রচলিত আছে আর তা হচ্ছে ‘চরে যাতায়াতে পাও, না হয় নাও’। অর্থাৎ বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাটা। এছাড়া কোন বিকল্প নেই।
এ কারণে পরিবহনের সুবিধা না থাকায় এবং তা অত্যান্ত ব্যয় বহুল হওয়ার কারণে চরাঞ্চলের কৃষিজীবি মানুষেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য, গরু-মহিষের দুধের সঠিক মূল্য পেতে বঞ্চিত হতো। ফলে উর্বর চরাঞ্চলের নদীবাহিত পলি মাটিতে বিপুল পরিমাণ ফসল ফলিয়েও তাদের উৎপাদন ব্যয় মিটিয়ে তা থেকে প্রকৃত লাভ ঘরে তুলতে পারতো না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো কৃষকরা। ফলশ্রুতিতে কৃষি নির্ভর শ্রমজীবি মানুষরা তাদের কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হয়ে অতিকষ্টে জীবন যাপন করতে বাধ্য হতো। জীবন জীবিকার তাগিদে চরাঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষকে কর্মের সংস্থানে জেলার বাইরের ছুটতে হতো।
কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন। শুকনো মৌসুমে যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী’। যা পরিবহনের ক্ষেত্রে সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি চরাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘোড়ার গাড়িগুলো মূলত: চালানো হয় একটি ঘোড়া দিয়ে। যে কারণে এধরণের গাড়িতে মালামাল পরিবহনের ব্যয়ও সঙ্গত কারণেই যথেষ্ট কম থাকে। এছাড়া গাড়ি তৈরীর উপকরণ খুব কম থাকায় এর নির্মাণ ব্যয়ও থাকে অনেক কম। ছোট ছোট মোটরের টায়ারের চাকায় চলে এসব গাড়ী। চরের বালুর উপর দিয়ে ওই গাড়ীগুলো দিব্যি চলতে পারে। প্রতিটি গাড়ীতে অনায়াসে ১৬ থেকে ২০ মণ কৃষি পণ্য পরিবহন করা যায়। এছাড়া মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি চরাঞ্চলের যাত্রী পরিবহনেও ব্যবহৃত হচ্ছে এসব টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি। এতে চালকসহ ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী বালু চর পেরিয়ে দ্রুত তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। বালু চর ছাড়াও এসব টাট্টু ঘোড়ার গাড়ীতে মেইন ল্যান্ডে এবং উপজেলা পর্যায়ের সড়কেও মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একটা ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে পাকা সড়কে ৩০ মণ মাল টানা সম্ভব বলেও জানালেন ঘোড়ার গাড়ীর চালকরা।
জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি উপজেলাতে টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন সব চাইতে বেশি। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চৈতন্য বাজার ও নিজাম খাঁ, হরিপুর গ্রামে সাঘাটার পাতিলবাড়ি, দিঘলকান্দি, এরেন্ডাবাড়ি, জুমারবাড়ি, খাটিয়ামারি, সন্যাসীর চর, এসব টাট্টু ঘোড়ার গাড়ী সব চাইতে বেশি। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জের চৈতন্য বাজার ও নিজাম খাঁ গ্রামেই শুধু চরাঞ্চলে চলাচলকারী বেশকিছু ঘোড়ার গাড়ী রয়েছে। চৈতন্য বাজারের খোরদা নামাপাড়া গ্রামের টাট্টু ঘোড়া গাড়ী চালকের সাথে কথা বলে জানা গেল, এসব ছোট্ট আকৃতির টাট্টু ঘোড়া খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং মাল টানায় যথেষ্ট পারদর্শী। টাট্টু ঘোড়া বালুতে চলতে পারদর্শী বলে এসব অঞ্চলে এদের কদর অনেক বেশি। এসব ঘোড়া আকৃতিতে ছোট এবং এদের লেজ অনেক বড়। গাধার চেয়ে এদের উচ্চতা সামান্য বেশি। টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির আর একটি সুবিধা হলো এসব ঘোড়ার দামও বেশি নয়। মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকায় একটি ঘোড়া পাওয়া যায়। তবে একটি সমস্যা হলো এই ঘোড়া গাইবান্ধায় পাওয়া যায় না। কিনতে হয় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রামের খড়িবাড়ী এবং টাঙ্গাইলের তুলসিপুর হাট থেকে। সেখানে গরু ছাগলের হাটের মত টাট্টু ঘোড়ার হাটও বসে বলে চালকরা জানালেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com