শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধায় আটিয়া কলা বিলুপ্তির পথে

গাইবান্ধায় আটিয়া কলা বিলুপ্তির পথে

সরকার শাহাদত হোসেন: বাংলাদেশ নানা রকম কলার জন্য বিখ্যাত। মোহনবাগ, চম্পা, সবরি, সাগর সব কলার নামই আমাদের পরিচিত। তবে এদের ভিড়ে একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল আটিয়া কলা বা বিচি কলা। গ্রামের হাট-বাজারে, মেলায় কিংবা বাড়ির আঙিনায় এই কলা এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল। কিন্তু আজকের দিনে সেই কলা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
আটিয়া কলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এতে বিচি থাকে। এ বিচি থাকার কারণে অনেকে খেতে ঝামেলা মনে করলেও প্রকৃত স্বাদপিপাসু মানুষ জানত এর আসল মিষ্টি স্বাদ। কলাটি আকারে একটু লম্বাটে, খোসা মোটা এবং সুগন্ধী। বিশেষ করে ভোরের দিকে পাকা আটিয়া কলার ঘ্রাণ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, যা অন্য কোনো কলায় পাওয়া যায় না।
এখন প্রশ্ন জাগে, কেন এতো জনপ্রিয় কলা হারিয়ে যাচ্ছে? প্রথমত, বাজার অর্থনীতির চাপ। বিচিযুক্ত হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা মনে করে এ কলা ততটা বিক্রি হয় না, তাই বাণিজ্যিকভাবে চাষ কমে গেছে। দ্বিতীয়ত, আধুনিক কলা চাষে হাইব্রিড ও দ্রুত ফলনশীল জাত বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী জাতগুলো ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আটিয়া কলা খাওয়ার উপকারিতাও কম নয়। এতে প্রাকৃতিক শর্করা, ভিটামিন সি, বি৬, পটাশিয়াম ও আঁশ প্রচুর পরিমাণে থাকে। শরীরকে শক্তি যোগায়, মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে এবং হজমশক্তি বাড়ায়। এর বিচিতে রয়েছে হালকা তিতকুটে উপাদান, যা কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে এবং পাকস্থলীর জন্য উপকারী। নিয়মিত আটিয়া কলা খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়, রক্তশূন্যতা কমে। শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি এক সহজলভ্য প্রাকৃতিক টনিক হিসেবে কাজ করত।
আরও একটি দিক হলো, আটিয়া কলা গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। অতিথি আপ্যায়নে, পূজা-পার্বণে, এমনকি গ্রামের মেলায় এই কলার কদর ছিল অসীম। এখনকার প্রজন্ম অনেকেই এই কলার নামও শোনেনি, যা আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির জন্য বড় ক্ষতি।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com