বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

করোনা-বন্যায় গরু নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় ফুলছড়ির খামারিরা

করোনা-বন্যায় গরু নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় ফুলছড়ির খামারিরা

স্টাফ রিপোর্টারঃ গত কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়েছে। আসন্ন ঈদে লোকসানের কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার আশায় ছিলেন তারা। কিন্ত সেই আশায় এবার গুড়ে বালি। এবার কোরবানির পশুর হাটে করোনা আর বন্যার প্রভাবে গরুর চাহিদা ও দাম কমার শঙ্কায় রয়েছেন ফুলছড়ি উপজেলার গো-খামারিরা। ফলে কোরবানির ঈদে এবারও লোকসান গুনতে হতে পারে। তারা বলছেন, করোনার প্রভাবে হাটে পশু বেচাকেনা হবে অনেক কম। অন্যদিকে বন্যায় চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না সবুজ ঘাস। চড়া দামে সংগ্রহ করতে হচ্ছে ঘাসসহ অন্যান্য গো-খাদ্য। বেড়েছে গরু পালনের খরচ। এ অবস্থায় গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত ফুলছডড়ি উপজেলার গবাদি-পশু সমৃদ্ধ চর-দ্বীপচরে প্রায় সাড়ে সাত হাজার গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া কোরবানির বাজার ধরার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গরু খামারি, চাষি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করে এখন করোনা আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের দুশ্চিন্তা করোনা আর বন্যা পরিস্থিতিতে পশুর চাহিদা ও দাম কমে গেলে তাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
সারাবছর গরু মোটাতাজাকরণ করে অনেকে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তবে ঈদে গরু বিক্রি করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না তাদের। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামের বিধবা, বেকার যুবক এবং কৃষক থেকে শুরু করে হাজারো মানুষ গরু-মহিষ, ছাগল, ভেড়া পালন করে। এখন অনেকই গরু মোটা তাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যে কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশকিছু গরু ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সারাবছর লালন-পালন করে গরু-মহিষ তৈরি করেন উপজেলার প্রায় দেড় হাজার প্রান্তিক খামারি।
আগাম বন্যায় বাড়ি ও খামার তলিয়ে যাওয়ায় ফুলছড়ির চরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, উড়িয়া ও গজারিয়া ইউনিয়নের গো-খামারিরা তাদের পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে-রাস্তায় কিংবা উঁচু কোন স্থানে। বন্যা কবলিত এসব এলাকার চারণভূমিগুলো থেকে গো-খাদ্য সংগ্রহ করা না যাওয়ায় পশু খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খাদ্যের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায় গরুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে তাদের ভেতর। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়ায় অনেক এলাকায় কম দামে পশু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বিশেষ করে চরাঞ্চলের খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন লোকসানেই পশু বিক্রি করে দিতে।
কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে ১৬টি গরু নিয়ে একটি খামার গড়ে তোলেন ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ উদাখালী গ্রামের এলাকার খাজা মিয়া। এসব গরু বাড়তি লাভের আশায় প্রতিপালন করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটছে তার দিন। শুধু খাজা মিয়া নয়, কালাসোনার আজগর আলী, রতনপুরের আরজান ও হাজীর হাটের শাহীনের মতো একই অবস্থা বিরাজ করেছে উপজেলার অন্যসব খামারিদেরও।
ঈদের আগে যেখানে বেপারিরা এসব খামারে এসে দরদাম হাঁকতো সেখানে এবার তাদের নেই আনাগোনা। একদিকে গো-খাদ্যের চড়া দাম তার ওপর করোনায় মন্দাবাজার। আর তাই উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় এসব খামারিরা।
খামারি খাজা মিয়া বলেন, প্রতিদিন তার ১৬টি গরুকে খাদ্য দিতে খরচ হয় ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা। প্রতি বছর তিনি গরু মোটাতাজা করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করেন। এবার ৩/৪ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন প্রতিবছর এরকম সময়ে পাইকাররা গরুর দাম দর করতে প্রতিনিয়ত পাক ফিরতো, এবছর এখন পর্যন্ত কোন গরুর পাইকার আসেনি।
ফুলছড়ি উপজেলার একমাত্র পশুর হাট কালিরবাজার গরু, ছাগল ও মহিষের হাট। প্রতিবছর ঈদের আগে মাইকিং করে ক্রেতা বিক্রেতাদের আহবান করা হলেও এবার এখন পর্যন্ত এ হাটটি চালু করা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গরুর হাট চালু করাসহ ক্ষুদ্র প্রান্তিক এসব গো-খামারিদের রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে মনে করেন ক্ষুদ্র, প্রান্তিক খামারিরা।
ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে এ উপজেলায় ষাড় গরু মোটাতাজা করা হয়েছে ২ হাজার ৫১৪ টি, বলদ গরু ১৮৯ টি, গাভী গরু ১ হাজার ৯৫৯ টি, মহিষ ১৫৮ টি, ছাগল ২ হাজার ৩৪৯ টি এবং ভেড়া ১৩৫ টি।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসার আবুল কালাম শামসুদ্দিন বলেন, খামারিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে যা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে। প্রনোদনা সহযোগিতা আসলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com