শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন
সাঘাটা প্রতিনিধিঃ আজ ৮ ডিসেম্বর। সাঘাটা থানাবাসীর পরম গর্ব ও আনন্দের দিন। ৫০ বছর পূর্বে এদিনে সাঘাটাবাসীর উপর হতে ২৬৬ দিনের পাকস্তানী বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, অবাঙ্গালীদের অমানুষির অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতন, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার চির অবসান ঘটার দিন। এদিনে গাইবান্ধার রনাঙ্গনের হানাদার বাহিনীর ত্রাসখ্যাত কিংবন্তীর মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডার রোস্তম আলী খন্দকারের ‘‘রোস্তম কোম্পানীর” যোদ্ধারা সাঘাটা থানা সদর বোনারপাড়া বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করে। সাঘাটা থানা সদর এতিহ্যবাহী ‘‘যুগন্দর সাংস্কৃতিক সংস্থা” প্রগতির ধারক সর্বোপরি অসহযোগ আন্দোলনে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের থানা শাখার কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ঢাকা হতে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের আদেশ নির্দেশ ঘোষণা ও গাইবান্ধা মহুকুমা থেকে আসা কর্মসূর্চী ঘোষণা সব এখানে আসত। বিকেলে এখান থেকে ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে আদেশ নির্দেশ দেয়া হত। সাঘাটার এখান থেকে জানানো হতো। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধারা এই যুগন্ধরে এসে সাঘাটার মাটিতে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। ৪ ডিসেম্বর ফুলছড়ি হানাদার মুক্ত করার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর সাঘাটা থানা মুক্ত করার মানসে ৬ ডিসেম্বর গলনার চর হতে বেলতলীর মফিজ মন্ডলের বাড়ীর হাইড আউটে অবস্থান নেয়। ফুলছড়ি যুদ্ধের বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের বেলতলীতে সমবেত হওয়ার খবরে পাকস্তানী সেনা ও অবাঙ্গালীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। ভীত সমস্ত পাকস্তানী সেনারা তাদের দোসর অবাঙ্গালীদের নিয়ে অভ্যন্তর সর্তকতার সাথে ৮ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৩ টায় বিশেষ ট্রেনযোগে রংপুরে চলে যায়। ঐদিনে বিকেল ৩টায় কোঃ কমান্ডার রোস্তম আলী খন্দকার, কোঃ টু-আই-সি গৌতম চন্দ্র মোদক, প্লাটুন কমান্ডার সামছুল আলম, মহসিন, নাজিমুদ্দিন, তছলিম, এনামুল, রফিকুল, আব্দুল জলিল তোতা, আবু বক্কর সিদ্দিক ও হামিদুল কাদেরীর নেতৃত্বে কোম্পানীর যোদ্ধারা বেলতলী হতে বোনারপাড়া অভিমুখে রওয়া হয়। বেলতলী হতে বোনারপাড়া ৩ মাইল পথের দুধারে দাড়িয়ে বিজয় উল্লাসে আফ্লুত শত শত নারী পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা আনন্দঘন পরিবেশে বিজয়ী বীরদেরকে স্বাগত জানায়। গগন বিদারী ‘‘জয়বাংলা” স্লোগানে মুখড়িত হয়ে ওঠে সারা পথ। সর্বস্তরে জনগণের স্বতস্ফুর্ত আনন্দ উল্লাসে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারাও আনন্দে ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে অগ্রসর হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বোনারপাড়া কমিউনিটি সেন্টারে পৌছার অল্পক্ষণের মধ্যে বীর সন্তানদেরকে একনজর দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে। সেখানে হাসি, কান্না, আনন্দ, দুঃখ, বেদনা মিলিয়ে আবেগঘন পরিবেশের আবহ সৃষ্টি হয়। সমবেত মানুষ তাদের র্দীঘ ৯ মাসের দৃঃখ বেদনার অব্যক্ত করুণ কাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ব্যক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের কথা আগ্রহ ভরে শোনে ও নানাভাবে তাদেরকে সান্তনা দেয়। তারা বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। কিছু মুক্তিযোদ্ধা বাটি গ্রামের খতিবুল্লা হাজীর বাড়িতে সাময়িক অবস্থান নেয়। ১২ ডিসেম্বর সাঘাটার সর্বস্তরের মানুষ বোনারপাড়া হাই স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করে। বক্তাদের কন্ঠে এ জনপদের মানুষের পাকস্তানী সেনা ও অবাঙ্গালিদের নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের করুন কাহিনী ব্যক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা র্দীঘ ৯ মাসে এ জনপদের মানুষের অপরিসীম ত্যাগ, অন্ন, আশ্রয়সহ অকৃত্রিম সাহায্য সহযোগীতার কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তাদেরকে নানাভাবে সান্তনা দেয় ও সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়। বহিরাগত সরকারী ও রেলওয়ে কর্মচারীদেরকে অগ্রাধীকারের ভিত্তিতে সহযোগীতা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা রেলের কর্মকর্তা কর্মচারীগণকে সংগঠিত করে ক্ষতিগ্রস্থ রেল লাইন ও রেল ইঞ্জিন মেরামত করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে বোনারপাড়া হতে গাইবান্ধা ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। একই সাথে রোস্তম আলী ,গৌতম চন্দ্র মোদক ও সামছুল আলমের প্রচেষ্টায় আই ও ডাব্লিউ বোনারপাড়া এ স্থানীয় জনগণের সহায়তায় কোম্পানী পরিচালিত বিভিন্ন যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ১৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর ( দলদলিয়া, শ্যামপুর, ধনারুহা ও গলনারচর) পাকা করা হয়।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!