বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
দারিয়াপুর প্রতিনিধিঃ দুই বছর ধরে যুবক সন্তানকে শিকলে বেঁধে রেখেছেন অসহায় মা। কোনোমতে নুন-ভাতে কাটে তাঁদের জীবন। ছেলের চিকিৎসার চিন্তা তাঁদের কাছে বিলাসিতার সমান! তাই বিধবা মাকেই ছেলের খাওয়ানো থেকে শুরু করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যাবতীয় কাজ করতে হয়। তিনি চোখ বুজলে ছেলের কী হবে? তা ভেবে চোখের পানি ফেলেন মা। এখন পর্যন্ত ওই ছেলেটির কপালে জোটেনি সরকারি সহায়তাসহ প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড। বিষয়টি নিয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন সাহর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছেলেটিকে সরেজমিনে দেখে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি সকল ধরণের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন বলে জানান।
হতভাগ্য ছেলেটির নাম রাজিব মিয়া সাকু (১৭)। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের দারিয়াপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত শাহজাহান মিয়ার একমাত্র ছেলে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দারিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২য় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলো রাজিব। এরপর পরিবারের দারিদ্রতার কারণে তার লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই মাকে সাহায্য করতে যোগ দেন কাজে। এরপর ১৪/১৫ বছর বয়সে হঠাৎ সে অমানুষিক আচারণ শুরু করে। এরপর তার মা তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসকরা জানান তার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রংপুরে কিছুদিন চিকিৎসার পর অর্থের অভাবে তাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর রাজিবকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার মা রমিছা বেওয়া। ফলে তার মানষিক রোগ আরও বেড়ে যায়। বেপরোয়া হয়ে ওসে সে। কাছে যাকে পায় তাকে কামড়ে দেয়। যানবাহনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ছেলে-মেয়েকে মারধর করে। কোন উপায় না পেয়ে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখেন তার মা।
নিজ এলাকার বাসিন্দা সালেহা বেগম জানান, অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করে কোনমতে সংসার চলে রমিছা বেওয়ার। তারপর ঘরে একটা পাগল ছেলে। তাকে ঠিকমত খাওয়াতে পারেনা। এরপর ছেলেটা অন্যের ক্ষতি করে। তাই ছেলেকে বেড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন মা। অতি কষ্টে দিন কাটে তার। অন্যের বাড়িতে যা পায় তাই দিয়ে পাগল ছেলেকে নিয়ে কোন মতে সংসার চলে তার।
খুকি বেওয়া জানান, রমিছা বেওয়ার ঘর-দর্জা কিছুই নেই। অন্যের জায়গায় একটু চালা তুলে কোন মতে দিন কাটছে তার। ঝড় বৃষ্টির সাথে লড়াই করে থাকতে হয় পাগল ছেলেকে নিয়ে। ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ নিজের বিধবা ভাতাও পানটি তিনি। ঝিঁয়ের বাড়ির কাজই তার একমাত্র সম্বল।
সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, পায়ে বেড়ি দিয়ে রাখাটা অমানবিক। এটা সিজোফ্রেনিয়া ধরনের একটি রোগ। এসব রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভাব।
বেড়ি বাঁধা রাজিব মিয়া সাকুর অসহাত্ত্বের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা এলাকার মানুষের।