সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন

সুন্দরগঞ্জে বৃষ্টি নামলে কাঁচা বাজারে আগুন লাগে

সুন্দরগঞ্জে বৃষ্টি নামলে কাঁচা বাজারে আগুন লাগে

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালক আকবর আলী ভ্যানে করে সিমেন্ট নিয়ে যাচ্ছিল এমন সময় বৃষ্টি-বাদল শুরু হয়। পলিথিল ছিল না তার ভ্যানে, সামন্য ভিজে যায় উপরের সিমেন্টের বস্তা। সে কারণে মালিক তাকে ৫০ টাকা ভাড়া কম দেয়। মালিকের বাড়িতে সিমেন্ট নামিয়ে দিয়ে সুন্দরগঞ্জ বাজারে যান আকবর আলী। সাধ্য অনুযায়ী কাঁচাবাজার নেয়ার জন্য দরদাম শুরু করে। দোকানদার হামিদুল ইসলাম বলেন গত তিনদিন হতে বৃষ্টি-বাদল শুরু হয়েছে। সে কারণে মচির কেজি প্রতি ৫০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। আকবর আলীর দাবি বৃষ্টি-বাদলে ভ্যানের ভাড়া কমে যায়, আর কাঁচা বাজারের দাম বেড়ে যায়। এ কেমন দিন পার করছি আমরা। বৃষ্টি-বাদলের দিনে খেটে খাওয়া মানুষের রোজগার কমে যায়। এমনও দিন যায় রিক্সা-ভ্যান চালানো বন্ধ থাকে। অথচ সেই মহুর্তে কাঁচাবাজারে আগুন লাগে।
সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরের ৭ নং ওয়ার্ডের রামডাকুয়া মহল্লার বাসিন্দা আকবর আলী। বিগত ২০ বছর ধরে ভ্যান চালান তিনি। ভ্যান চালিয়ে দুই কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে আইএ পাশ করে ঢাকায় চাকরি করছে। তারপরও নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তার।
উপজেলার ধুমাইটারী গ্রামের দিন মজুর রহমান মিয়া বলেন প্রতিদিনের মজুরি ৫০০ টাকা। সংসারে সদস্য সংখ্যা ৬ জন। প্রতিদিন চাল লাগে ৩ কেজি। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি চাল ৬০ টাকা। সে মোতাবেক চাল ১৮০ টাকা। তেল, ডালসহ অন্যান্য পর্ণ্যসামগ্রী ২২০ টাকায় হয় না। সপ্তাহে যদি দুই দিন কাজ না হয়, তাহলে তো পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে থাকতে হবে। বৃষ্টি-বাদল শুরু হলে তো আগুন লাগে কাঁচাবাজারে। প্রতিটি জিনিসের দাম প্রায় ৫০ টাকা হতে ১০ টাকা কেজি প্রতি বেড়ে যায়।
হাট-বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের দোষ দিয়ে কোন লাভ নাই বলে দাবি করেন সুন্দরগঞ্জ বাজারের কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম। বৃষ্টি-বাদল শুরু হলে আরদে প্রতিটি জিনিসের দাম কেজি প্রতি ৫০ হতে ১০ টাকা বেড়ে যায়। সে কারনে খুচরা বিক্রেতাগণকে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। গত এক সপ্তাহ আগে মরিচ বিক্রি হত কেজি ২০০ টাকা, আলু ৬০ হতে ৪৫ টাকা, বেগুন ৪০ হতে ৫০ টাকা, পটল ৪৫ হতে ৫০ টাকা, কচু ৬৫ হতে ৭০ টাকা, করলা ৬০ হতে ৬৫ টাকা, শশা ৪০ হতে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৫০-৫৫ টাকা, কুমড়া ৫০ হতে ৬০ টাকা, কাকরোল ৫০ হতে ৫৫ টাকা, মুলা ৫০ হতে ৫৫ টাকা, পেঁপে ৩০ হতে ৩৫ টাকা, পেঁয়াজ ৭০ হতে ৮০ টাকা, রসুন ২৫০ হতে ২৬০ টাকা, আদা ৩০০ টাকা দরে। বৃষ্টি-বাদল শুরু হওয়ায় চার দিন পর গত শনিবার হতে মরিচ কেজি প্রতি ৫০ টাকা, অন্যান্য পর্ণ্য কেজি প্রতি ৫ টাকা হতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতের শাক কেজি প্রতি ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃষ্টি-বাদলের কারণে শাক ও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে দাবি করেন উপজেলার তারাপুর চরের সবজি চাষি হক্কালী মিয়া। তিনি বলেন সবেমাত্র ক্ষেত হতে বেগুন, মুলা, পটল, লাল শাক, মুলা শাক উঠাতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে টানা বর্ষন, ইতিমধ্যে শাক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বীজ, সার, দিনমজুর, হালচাষ ও কীটনাশকের দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন আর সবজি চাষাবাদ করে খরচ উঠছে না। তাছাড়া বৃষ্টি-বাদল হলে তো আর কোন কথায় নাই। বাজারের লেগে যায় আগুন।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com