বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হলেও মার্স্টাস পাসের সনদে চাঁদ মিয়া প্রভাষক পদে শিক্ষকতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব ভুয়া সনদে প্রায় ২০ বছর ধরে প্রভাষক পদে চাকুরি করছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চাঁদ মিয়া নামে শিক্ষক সে সর্বানন্দ ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। এ নিয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এক অভিভাবক।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেন পূর্ব বাছহাটি গ্রামের আছর উদ্দিন সরকারের ছেলে চাঁদ মিয়া। ওই কলেজের কৃষি বিজ্ঞান শাখা থেকে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার যে সনদ ব্যবহার করেছেন সেটি জাল ও ভূয়া। প্রকৃত পক্ষে তিনি ওই বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করতে পারেননি। আর বাকি অনার্স ও মাস্টার্স পাস করা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। সে প্রায় ২০ বছর আগে আমগঞ্জ আলিম মাদ্রাসায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করে। কিন্তু যে সনদে প্রভাষক পদে কর্মরত রয়েছে তা ভূয়া ও জাল দাবি করে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন অছিম উদ্দিন সরকার নামে এক ব্যক্তি। অভিযোগে তিনি দাবি করেন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে সনদ যাচাই করতে নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে একটি আবেদন করেন ওই অভিভাবক। এর ১৫ দিন পরে বোর্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে পারেন সনদটি সম্পূর্ণ ভূয়া ও জাল। তবে সেই সনদধারীর রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা রয়েছে বোর্ডে। এছাড়া তার নামে কোন সনদ নেই বলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সুত্রে জানা গেছে। এ সংক্রান্ত সনদ আছে কি নেই তা নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে ডাকযোগে একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ডাক বিভাগের ১১৬ নম্বর নিবন্ধনে ওই কাগজপত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডের পাঠানো চিঠি পাওয়ার পর তা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে ওই প্রভাষক চাঁদ মিয়া সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, আমি ১৯৯৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে পাশ করেছি। সুতরাং সনদে কোন ত্রুটি নেই। পারিবারিক শত্রুতার জেরে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।
অভিযোগকারী অছিম উদ্দিন বলেন, ওই শিক্ষক জাল সনদে প্রায় ২০ বছর ধরে চাকুরি করছেন। তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সার্টিফেকেট যাচাই করতে আমি নিজে শিক্ষা বোর্ডে যাই নিশ্চিত হই যে, সনদটি জাল ও ভূয়া। তিনি আরো অভিযোগ করেন, শিক্ষক চাঁদ মিয়ার সনদ সঠিক না ভূয়া সেটা নিশ্চিত করতে তার যাচাই করার জন্য আবেদনের কাগজটি ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু যখন তারা জেনেছে সনদগুলো জাল এরপর থেকে তাকে কাগজ দেখাতে অস্বীকার করেন।
ওই মাদ্রাসার সুপার মোজাম্মেল হক বলেন, আমি জাল সনদে ওই শিক্ষকের চাকুরি করার গুনজন শুনেছি এবং এ সম্পর্কে কোন প্রমাণ পায়নি। অধ্যক্ষ বরাবর বোর্ড থেকে পাঠানো প্রত্যয়নপত্র ধামাচাপা দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা চিঠি আমার বরাবর এসেছিলো। কিন্তু সেটা হাতে পাওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নিয়ে গেছে। বোর্ডেও পাঠানো চিঠি নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জিয়াউল করিম সাজা বলেন, আমি এ সংক্রান্ত কোন কাগজ পাইনি। এব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েতুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোন শিক্ষক যদি এমন প্রতারণার আশ্রয় নেয় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।