সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন
সাদুল্লাপুর প্রতিনিধিঃ নিভৃত পল্লীর আলতাব হোসেন। বয়স ৭১ বছর ছুঁইছুই। নেই জমি ও ঘর। কখনো রাস্তায় আবার কখনো থাকেন অন্যের ঘরে। অস্থায়ী বসবাসে প্রায় ৩০ বছর পাড় হলেও অভাব-অনটনের ধাক্কায় আজও কপালে জোটেনি নিজের জমি ও ঘর। যেন যাযাবরদের মতো জীবনযাপন এই বৃদ্ধের।
আলতাবের বাড়ি সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের জামুডাঙ্গা (ব্যাপারীপাড়া-বাদিয়াপাড়া) গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আলী বকশ মুন্সীর ছেলে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক আলতাব হোসেন। প্রায় তিন যুগ আগে থাকতেন রংপুরে। সেখানে পরিবার নিয়ে দূর্বীষহ জীবন কাটাতেন। সব সময়ে নানা অভাব-অনটন লেগে থাকায় তার স্ত্রী চলে যান অন্যত্র। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করলে সেটিও সংসার করেনি। কারণ একটাই অভাব ছাড়ে না তাকে।
বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রায় ৩০ বছর আগে ছুটে আসেন সাদুল্লাপুরের জামুডাঙ্গা গ্রামের স্বজনদের বাড়িতে। এখানে শ্রম বিক্রি করে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন। তবে নিজস্ব কোন জায়গা জমি কিংবা বসবাসের জন্য ঘর করতে পারেনি। এখনো রাতযাপন করেন রাস্তায় কিংবা অন্যের ঘরে। এরই মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ভারসাম্য হয়ে পড়েন। বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া এই আলতাবের শরীরে নানা রোগে বাসা বেঁধেছে। তবুও দু’বেলা খাবারের সন্ধানে ছুটাছুটির চেষ্টা করেন এদিক-সেদিক। কিন্ত তেমনভাবে ছুটতেও পারেন না। রোগাক্রান্ত শরীর আর বার্ধক্য বয়সে প্রায় অচলাবস্থা তার। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে রাতে কোথায় খাবেন এবং ঘুমাবেন খুঁজে পান না কোন নির্দ্দিষ্ট ঠিকানা। যেন শেষ বয়সেও জীবন সংগ্রাম থামছে না আশ্রয়হীন এই বৃদ্ধের।
এ বিষয়ে বৃদ্ধ আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। কোন কথায় বলতে পারছিলেন না। তবে ইশারা-ইঙ্গিতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের দাবি জানান তিনি।
আলতাফ হোসেনের মেয়েজামাই রনজু মিয়া বলেন, আমিও গরীব মানুষ। ঠিকমতো অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান নেই। তারপরও শ্বশুরের জন্য কিছু যোগান দিতে হয়। তার নেই কোন আশ্রয়স্থল। পান না সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা বা বয়স্ক ভাতাদি। সরকারি-বেসরকারিভাবে তাকে যদি একটি ঘর দিয়ে সহযোগিতা করা হতো তাহলে হয়তো শেষ বয়সে কিছুটা ভালো থাকতে পারতেন তিনি।
ওই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, সাদুল্লাপুরে যাতায়াত করতে প্রায়ই আলতাব হোসেনকে চোখে পড়ে। অনেক সময় রাতেও শুয়ে থাকেন রাস্তার ধারে। খুব করুণ অবস্থা মানুষটির। তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করার দরকার।