রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন

সাদুল্লাপুরে মাদকে ভয়াবহ কারবার অভিভাবকরা শঙ্কিতঃ অপরাধ বাড়ছে

সাদুল্লাপুরে মাদকে ভয়াবহ কারবার অভিভাবকরা শঙ্কিতঃ অপরাধ বাড়ছে

সাদুল্লাপুর প্রতিনিধিঃ সাদুল্লাহপুর ও নলডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকায় মাদক পরিস্থিতি ভয়াবহ। গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে মাদকের কারবার।
কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা মাদকের আগ্রাসন। পুলিশের অভিযান সত্বেও মাদক ব্যবসা থেমে নেই। উল্টো মাদকের কারবার আরও বাড়ছে। এর মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা নলডাঙ্গা এলাকায়।
নলডাঙ্গায় অন্তত: ৯টি স্পটে প্রকাশ্যে বেচা-কেনা হচ্ছে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইয়াবা ও টাপেন্টাডল ট্যাবেলেটসহ সব ধরণের মাদক। নলডাঙ্গায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সহজলভ্য। হাত বাড়লেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের মাদক। মাদকের বিষে বিষে নীল হয়ে যাচ্ছে মাদক সেবী কিশোর-যুবা। ঝড়ে যাচ্ছে অনেক মেধাবি শিক্ষার্থী।
মাদক সেবনে এক শ্রেণির স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সী যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ আসক্ত হয়েছে পড়ছে। তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং কালচার। মাদক কেনার টাকা যোগাতে করছে চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে সব ধরণের অপরাধ।
মাদকাসক্ত সন্তানদেন নিয়ে দেখা দিয়েছে পরিবারে অশান্তি। অভিভাবকরা এ সব সন্তানদের কাছে হয়ে পড়েছেন জিম্মি। শিক্ষার্থীরা যেমন লেখা পড়া ছেড়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে. তেমনি মাদক সেবন থেকে কিশোর-যুবা অপরাধ জগতে পা বাড়াচ্ছে।
জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কার্যকলাপ। মাদক কারবারি ও সেবনকারিদের অত্যাচার-উপদ্রবে সাধারন মানুষও অতিষ্ট। ফলে এলাকায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এতে অভিভাবক মহলসহ এলাকার শান্তিকামী মানুষ সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার নলডাঙ্গার কাচারী বাজার, রেলস্টেশন, কালীবাড়ী রোড, কলেজপাড়া, ঢুলিপাড়ায় অবাধে মাদক কেনা-বেচা ও সেবন চলছে। এছাড়া কামারপাড়ায়, মিরপুর, ধাপেরহাট, রসুলপুর, ইদিলপুর, জানিপুর, ঢোলভাঙ্গা, গাছুরবাজারসহ খোদ উপজেলা বন্দরহাট বাজার এলাকার বিভিন্ন স্পটে এখন মাদকের স্বর্গ রাজ্য।
মাদক সেবী ও বখাটে যুব সমাজরা তাদের ভাষায় মদ্দের মোড়,ব্যাসেলর,পয়েন্টসহ বিভিন্ন সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে মাদকের স্পটে যাচ্ছে। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হলেও মাদকের কারবার থামছে না। মাদক বিক্রেতারা এখন কৌশল পাল্টিয়েছে গ্রাম-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লা আর শহরের অলিতে গলিতে ফেরি করে মাদক বিক্রি করছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গার ইউনিয়নে নয়টি স্পটে মাদকের নিরাপদ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে কালিবাড়ী, স্টেশনের আশেপাশে, মানদুয়ার মান্দীয় পাড়া রোড নাজিম মোড়, বেহারাপাড়া, ধুলিপাড়া, সরদার পাড়া, সরবড় পুকুরের পাশে ঢাকাইয়া পট্টি, কাচারী বাজার, বন্দরবাজারসহ ১ নং রেলগেট এলাকা এখন মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ ফেনসিডিল এর মত বিভিন্ন নেশার জন্য স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের অদূরে কালীবাড়ি এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ ও বহু পরিবার। যাদের ভবিষ্যতে দেশের হাল ধরার কথা, তারা নেশা করে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রশাসন নির্বাক। ২/১ মাস আগেও নেশার জন্য এক যুবক নিজ স্ত্রীকে পর্যন্ত খুন করেছে।
স্থানিয় সূত্র আরও জানায়, মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে রাজনৈতিক দলের এক শ্রেণির পাতিনেতা। এ ছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে তাদের লালিত কিশোর গ্যাং। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে বেচা-কেনার মহাউৎসব। নলডাঙ্গায় মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় অনেক দূর-দুরান্ত থেকে চলে আসে মাদকসেবীর দল।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এলাকায় চুরি ছিচকে চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বাগ্রাসী এ মরণ নেশার কারণে তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। তবে শুধু তরুণরাই নয়, এখন কিশোর, এমনকি কিশোরীরাও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে।
মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অকালে প্রাণ ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা করছে এলাকার শান্তিকামী সচেতন মহল। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত কখন যে মাদকের নেশার জালে আটকে পড়ে তাদের প্রিয় সন্তান। অনেক অভিভাবক তাদের মেধাবী ছেলেদের নেশাগ্রস্থ হওয়ার কথা জানেন না।
এদিকে এই মাদক ঠেকাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও থানা পুলিশ প্রশাসন অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সাদুল্লাপুর থানা সুত্রে জানা গেছে, পুলিশ গত আগস্ট মাসে ১৯ কেজি গাঁজা, ২৪৪ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও এক হাজার ৪শ’ পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশনের এ্যাম্পুল জব্দ করেছে। এতে মাদক মামলা হয়েছে ১০টি।
এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম রানা বলেন, গাইবান্ধা পুলিশ সুপার মোঃ কামাল হোসেনের সার্বিক নির্দেশনায় নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com