শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ এক সময়ে শীত নিবারণ কিংবা নবজাতকের জন্য ব্যবহার হতো কাঁথা। এমনকি বালুশের উপরেও ব্যবহার ছিল রঙবেরঙের কাঁথার। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কাঁথাগুলো। তবে আবহমান গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যকে এখনো আকঁড়ে ধরে রাখছে নিম্ন আয়ের বধূরা। তাদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় সুঁইসুতোর বন্ধনে তৈরী করে চলছেন চিরচেনা কাঁথা।
গতকাল শনিবার ৭ জানুয়ারি বিকেলে জামালপুর ইউনিয়নের বুজরুক রসুলপুর গ্রামের জলিল উদ্দিন মুন্সীর বাড়ির উঠানে দেখা যায় কাঁথা সেলাইয়ের দৃশ্য। এসময় দুই গৃহবধূ গাছের ছায়ার নিচে বসে আঙ্গুলের অজস্র খোঁচায় ফুটিয়ে তুলছিলেন কাঁথা।
জানা যায়, প্রায় তিন দশক আগে গাইবান্ধার প্রত্যান্ত অঞ্চলে গৃহস্থালীদের পুরনো সুতি কাপড় ও সুঁই সুতো দিয়ে নারীরা তৈরী করতেন রঙ বেরঙের কাঁথা। বাহারী সুতার তৈরী এসব কাঁথা প্রত্যেকটি বাসা বাড়িতে নজরকাড়তো এগুলো ছিল মানুষের শীত নিবারণে প্রধান অবম্বন। সেই সঙ্গে নবজাতক ও বালুশের উপরেও ব্যবহার ছিল অন্যতম। এছাড়াও ব্যবহার করা হচ্ছিল বিছানাপত্রেও। বিয়েতেও কাঁথা উপহারের প্রথা ছিল অনেকাটাই। ফলে নিম্ন আয়ের অধিকাংশ গৃহবধূরা নিজের পাশাপাশি অন্যের বাড়িতে নানা রঙের কাঁথা সেলাই করে অর্থ উপার্জন করছিলেন। কিন্ত আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্যে হারিয়ে যাচ্ছে কাঁথাগুলো। এখানে দখল করে নিয়েছে লেপ, কম্বল, চাদর ও তোয়ালে। বর্তমানে কাঁথার ব্যবহার মৃতপ্রায়। তবে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাঁথার ব্যবহার কমে গেলেও কমেনি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে। এসব পরিবারের নারীরা এখনো নিপুন হাতের কারুকার্যে তৈরী করে চলছেন রকমারি কাঁথা।
গৃহবধূ ছামিনা বেগম (৪০) বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তাই কাঁথার বদলে অন্য কোন বস্ত্রাদি কেনার সামর্থ নেই। এ পরিস্থিতিতে বাড়ির পুরনো সুতি কাপড় দিয়ে এখনো কাঁথা বানিয়ে ব্যবহার করছি।
জরিনা বেওয়া (৭০) নামের এক প্রবীণ নারী জানান, গ্রামবাংলার মানুষের চিন্তা ভাবনা ও শিল্পবোধ জড়িয়ে রয়েছে কাঁথার সঙ্গে। এই কাঁথাকে জীবন থেকে বাদ দিলে হারিয়ে যাবে গ্রামীন সংস্কৃতি।