রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ আর চারদিন পরেই আনন্দের ঈদ। কিন্তু এবার ঈদের সেই আনন্দ নেই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জের রংপুর চিনিকলের ৩৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা কারোর মুখেই। কেননা গত চার মাস ধরে তারা কোন বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদেরকে। তাই বাধ্য হয়ে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন অনেকে। এখন তারাও টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এতে করে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে অসহায় এ পরিবারগুলোকে।
রংপুর চিনিকল ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে চিনিকলের ৩৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা কোন প্রকার বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে তারা বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর হাতে গোণা কয়েকদিন পরেই ছোট-বড় সকলের আনন্দের ঈদ হলেও আনন্দ নেই এসব শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা কারোর মুখেই। কেননা গত চার মাস ধরে বেতনের দাবিতে চিনিকলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ধর্না দিয়ে বসে থাকলেও কোন সুফল মেলেনি। বেতনের একটি টাকাও দেননি তারা। তাই বাধ্য হয়ে গত ১৩ জুলাই রংপুর চিনিকলের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে ৭ দিনের লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দেন রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন। সে অনুযায়ী তারা শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনও করেন। কিন্তু তাদের দাবি পূরণে মেলেনি কোন আশ্বাস এবং দেওয়া হয়নি বেতনও।
সাইদুর রহমান, আজাদুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, আপেল মাহমুদসহ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, করোনার কারণে কোন কাজ না থাকায় বেকার বসে থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলাম। এ অবস্থায় চিনিকলের আখের জমিতে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছি। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও শ্রমের মূল্য পাইনি। ফলে যেই অভাব সেই অভাবই থেকে গেল। এখনো সুদের উপর টাকা নিয়ে খাচ্ছি। কিভাবে এতো ঋণ পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না।
রুহুল আমিন, আব্দুল আউয়াল, মতলুবর রহমান, মাহফুজুর রহমানসহ কয়েকজন কর্মচারী বলেন, আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। আর তাই ছেলে-মেয়েদের কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয় থেকে বেতনের জন্য চাপ দিচ্ছে। টাকা দিতে না পারায় তারা অপমানও করছেন। ছেলে-মেয়েরা গত ঈদেও নতুন জামা চেয়েছিল, দিতে পারিনি। এবারও তারা ঈদের নতুন জামা চেয়েছে। অথচ হাতে কোন টাকা নেই। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। লজ্জায় ওদের সামনে যেতে পারিনা। রাতে ওরা ঘুমালে তারপর বাড়ীতে ফিরি।
ইক্ষু উন্নয়ন সহকারী অ্যাসোসিয়েশনের (সিডিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, খুবই সামান্য বেতনের চাকরি করে বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সংসার চালাতে হয়। দিন এনে দিন খাই অবস্থা। সেখানে আবার গত চার মাস ধরে বেতন বন্ধ। ফলে একবেলা আধপেটা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দোকানে বেশি বাকী হওয়ায় দোকানদারও আর কিছু দেন না। বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের কাছেও ধারদেনা করেছি। এখন তারাও টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় চরম বিপদে পড়েছি।
রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ফটু বলেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে গত ১৩ জুলাই থেকে অবস্থান ধর্মঘট, কর্মবিরতি, মানববন্ধন, রেলপথ অবরোধ ও ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিলসহ শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। তারপরও কোন কাজ হয়নি। সামনে ঈদ। এখনো কিছুই কিনতে পারিনি। লজ্জায় স্ত্রী-সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এফ এম জিয়াউল ফারুক বলেন, শুধু যে শ্রমিক-কর্মচারীরাই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, তা কিন্তু নয়। চিনিকলের কর্মকর্তারাও বেতন পাচ্ছেন না। ১২ কোটি টাকার চিনি অবিক্রিত আছে। চিনি বিক্রি না হওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঈদের আগে কিছু দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এ এফ এম জিয়াউল ফারুক।