শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সারা রাত ঘুম ধরে না, সব সময় ভয়ে আতঙ্কে থাকি এই বুঝি বাড়ি ভাইঙা পড়ে নদীতে। এবার বুঝি আর বসতভিটায় থাকা হবে না। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিব, দিশা (বুঝতে) পাচ্ছি না। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের মুখে থাকা বসতভিটায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের দাড়িয়ারভিটা গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৪৬)।
আনোয়ারা বলেন, এখনো বানের (বন্যার) সময় হয় নাই, তাতেই যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, বান এলে আর বাড়িভিটা রক্ষা হবে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার তেমন জায়গা নেই, খুবই দুশ্চিন্তা হচ্ছে। শুধু আনোয়ারা নয় একই আতঙ্কে রয়েছেন ব্রহ্মপুত্র পাড়ে ওই গ্রামের আব্দুল আজিজ, শামছুল আলম, আবু বক্কর, জাহিদুল ইসলাম, ছকু মিয়াসহ অনেকে।
সরেজমিনে উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা গ্রামে দেখা যায়, এ এলাকায় ভাঙনের গতি বেড়ে গেছে। ভাঙন এলাকার লোকজনের মাঝে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। বাড়িঘর ভেঙে ও গাছপালা কেটে নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন নদীপারের মানুষ। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ফুলছড়ি উপজেলার সাত ইউনিয়নেই বন্যা ও নদীভাঙন দেখা দেয়। নদীভাঙনে সর্বহারা হয় নদীপারের শত শত পরিবার। নদীপারের বাসিন্দাদের প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র স্রোতের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, গাছপালা ও আবাদি জমি।
আরও দেখা যায়, উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, ভুষিরভিটা, দাড়িয়ারভিটা, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী, সন্ন্যাসীর চর, আনন্দবাড়ী, চর চৌমহন, ধলী পাটাধোয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া, গলনা ও জিয়াডাঙ্গা গ্রামে। এ ছাড়া ফুলছড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ বছর ভাঙনের শিকার হয়ে এরই মধ্যে দুই শতাধিক পরিবার তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে, উড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর-কালাসোনা সরকারি প্রাথমিক, দাড়িয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকার বহু ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।
টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে নদী তীরের অনেক বাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পভুক্ত মুন্সিপাড়ায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মুন্সিপাড়া এলাকার রক্ষায় জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লকের কাজ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদার এখনো জিও ব্যাগের কাজই করতে পারেনি। প্রকল্পের কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় উপপ্রকৌশলী মজিবর রহমান বলেন, নদী ভাঙনরোধে উড়িয়ার কটিয়ারভিটা থেকে ভূষিরভিটা পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ৬৫০ মিটার এলাকায় ৬৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। প্রকল্প এলাকা ভাঙনমুক্ত হলেও আশপাশের কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপপ্রকৌশলী আরও বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে মুন্সিপাড়া এলাকার প্রকল্পের কাজে কিছুটা বিঘœ ঘটছে।