সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ যাদের কঠোর পরিশ্রমের আমরা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন শহরে সুস্থ্য পরিবেশে বসবাস করছি, সেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এখন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে । কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সনাতন পদ্ধতি অবলম্বনের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন গাইবান্ধা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।
বর্জ্য অপসারণে মাস্ক, গ্লাভস, বুট জুতা, হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে তাদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত রেইনকোর্টের অভাবে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হয় তাদের।
১০.৫৪ বর্গকিলোমিটার গাইবান্ধা পৌরসভার ৪৩ টি পাড়া মহল্লায় প্রতিদিন কয়েক টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। পৌরসভার অন্য সব বিভাগে আধুনিক হলেও বর্জ্য অপসারণ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের এখনো আধুনিকায়ন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, অনেকবার পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে এক রকম সনাতন পদ্ধতিতেই চলছে দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম।
গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কোনো রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন- মাস্ক, গ্লাভস ও বুট জুতা ছাড়াই ময়লা সংগ্রহ ও পরিষ্কার করছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। পাশাপাশি তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম।
গাইবান্ধা পৌরসভার আওতাধীন গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কোন রকম নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করছিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ পরিচ্ছন্নতা কর্মী জানান পৌরসভা থেকে তো কোনো কিছুই দেয় না, দিলেও অনেক কম পাই, আর তা কিছুদিন পর নষ্ট হয়ে যায়। আর যে বেতন পাই, তা দিয়ে বুট কেনার ক্ষমতা নাই।
কাজ করতে গেলে কোনো অসুবিধা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গেলে অনেক সময় ব্লেড দিয়া হাত, পা কাইটা যায়, আবার মাঝে মাঝে অসুস্থ হইয়া পড়ি। কিন্তু কী করুম, এইটা তো আমার কাজ।’
আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন ‘অসুস্থ তো মাঝে মাঝেই হই, কিন্তু কাম বন্ধ করলে কী খাইমু। আপনারা আছেন, যদি কিছু গ্লাভসের ব্যবস্থা কইরা দিতে পারেন, তাহলে উপকার হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভায় নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে সবাই দলিত শ্রেণীর। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনেক বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই। আর এর জন্য পৌরসভা থেকে কোনো রকমের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেই । এই বিষয়ে গাইবান্ধা পৌরসভার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, আমাদের যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করেন, তাদের জন্য মাস্ক, বুটসহ অনেক সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকি। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা যে ডিমান্ড দেই তা ফান্ড স্বল্পতার কারণে একসাথে সরবরাহ করা যায় না। যতটুকু পারা যায় তা সরবরাহ করি।
তিনি বলেন, অনেক সময় তারা নিজেরাও এইগুলো ব্যবহার করে না। ডিমান্ড দেয়া আছে, সামনে বর্ষা মৌসুমে তাদের জন্য রেইনকোর্টের ব্যবস্থা আমরা করছি। পাশাপাশি তাদেরকে কোনো প্রশিক্ষণের আওতায় আনা যায় কিনা তাও দেখছি।