রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়াস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ের সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলীর (ওয়ে) গোডাউন থেকে ফিসপ্লেট চুরির মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। পুলিশের আসামি গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেই। এদিকে জড়িত রেল কর্মচারিদের বিরুদ্ধে রেল কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বোনারপাড়াস্থ সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলীর (ওয়ে) গোডাউনে রেলপথ মেরামতের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ১৪ হাজার ফিসপ্লেট রক্ষিত ছিল। গত ১০ আগষ্ট সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলী মাজেদুল ইসলামকে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন অবসরে যাওয়া সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলী দীপক কুমার সিংহ। ওইদিন দায়িত্ব হস্তান্তরের পর গোডাউনটি খোলার পর গুনে গুনে ফিসপ্লেট বুঝে দেওয়ার সময় দেখা যায়, ৮ হাজার ৮৬৭ পিস ফিসপ্লেট নেই। এসবের ওজন প্রায় ৪৪ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক মুল্য ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকা।
সাবেক সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ে) দীপক কুমার সিংহ বিষয়টি তাৎক্ষনিক উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় রেলওয়ে থানা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে অবহিত করেন। রেলওয়ে থানা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিসপ্লেট চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষের নির্দেশে গত ১০ আগষ্ট বোনারপাড়া রেলওয়ে থানায় মামলা করা হয়। দীপক কুমার সিংহ বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় গোডাউনের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তাকর্মী (রেল কর্মচারি) সবুজ মিয়া, রব্বানী মিয়া, রাজু মিয়া, সামিদুল ও মুকুল মিয়াকে আসামি করা হয়।
এদিকে মামলা দায়েরের পর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত একমাস সাতদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এমনকি জড়িত রেল কর্মচারিদের বিরুদ্ধে রেল কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।
অপরদিকে ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগ থেকে দুইটি কমিটি বোনারপাড়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং তদন্ত করেন। তদন্ত কমিটি জানান, সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা প্রহরীরা রেলওয়ের মালামাল রক্ষনাবেক্ষনের কাজে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত থাকেন। তারপরও তাদের যোগসাজস ছাড়া এই ধরণের চুরি সংঘটিত হতে পারে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মচারি অভিযোগ করেন, রেলের কিছু অসাধু কর্মচারি যোগসাজস করে লোহা ব্যবসায়ির কাছে এসব ফিসপ্লেট বিক্রি করে দেয়। রাতের আধারে ভ্যান ও পিকআপ যোগে এসব ফিসপ্লেট পাচার হয়েছে। একই কথা জানালেন গোডাউনের দক্ষিন পাশে রেলগেট সংলগ্ন একাধিক দোকানি।
মামলার বাদী দীপক কুমার সিংহ বলেন, রেলওয়ে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা প্রহরীদের গ্রেপ্তার করছে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না। রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা প্রহরীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করায় চুরি বিষয়টি ধামাচাপায় পড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাপস কুমার পন্ডিত বলেন, অগ্রগতি নেই, অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ ঘটনার পর থেকে তদন্ত অব্যাহত আছে। এজাহার নামীয় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্ত তারা রেলের কর্মচারি। তাদের সংগঠন শক্তিশালি। তথ্য প্রমাণ ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলেও পুলিশ আসামিদের ধরতে পারে।