রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

বেদে সম্প্রদায়ের ভাসমান জীবনে নেমে এসেছে দুর্দিন

বেদে সম্প্রদায়ের ভাসমান জীবনে নেমে এসেছে দুর্দিন

স্টাফ রিপোর্টারঃ নদীর স্রোতে ভাসা কচুরিপানার মতোই ভাসমান ওদের জীবন। আজ এখানে, তো কাল ওখানে। চলতি পথে কোথাও মায়াতে জড়িয়ে গেলে, তা ফের ছিন্ন করতে হয়। তারপর আবার ছুটে চলা নতুন কোনো আশ্রয়ের খোঁজে। এভাবেই চলছে জীবন। আধুনিক সমাজ ও সভ্যতার ধার ধারে না ওরা। শত কষ্টের মাঝেও এতেই যেন ওরা সব সুখ-শান্তি খুঁজে পায়। বেশির ভাগ বেদে সম্প্রদায়ের পরিবার খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টাংগিয়ে দিনের পর দিন পার করছে।
গত দুই সপ্তাহ আগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলশীঘাট হেলিপ্যাডে আশ্রয় নেয় ৩০ টি বেদে পরিবার । তারা সবাই ঢাকার বিক্রমপুর থেকে এসেছেন বলে জানা যায়। গতকাল বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস স্থলে গিয়ে দেখা গেছে তাদের করুন চিত্র। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদের মধ্যে দু-বেলা খাবারের জোটাতে গিয়ে জন্য তাদের কেউ কেউ গ্রামের নিভৃত পল্লীতে সাপের খেলা, বানরের খেলাসহ তাবিজ বিক্রি করে তাঁবুতে ফিরে এসেছেন। তাই দুপুরের খাবার খাচ্ছেন বিকালে । অনেকেই আবার ক্লান্ত শরীরে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । রান্নার পদ শুধুই সাদা ভাত ও আলুর ভর্তা, ভাজি।
বেদে বহরের সদস্য মোঃ অন্তর (৩৫) বলেন, আমাদের অবস্থা আর আগের মত ভালো নেই। বাপ-দাদার ব্যবসায় আর পেট চলে না । আগের মত এখন আর গ্রাম-গঞ্জে, হাটে-বাজারে ব্যবসা হয় না। আমাদের মহিলাদের গ্রামে গ্রামে বাত এবং দাঁতে পোকার যে চিকিৎসা করে গ্রামের মানুষজন এখন আগের মত গ্রহন করে না।
পেশাগত নানান সমস্যার কথা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা বেদেরা মুসলিম হলেও সমাজ থেকে উপেক্ষিত । সমাজ আমাদের ভালো চোখে দেখে না ।তাই অন্য কোন পেশায় যেতে পারছি না ।
বেদে হারুন (৩০) জানান, আগে সাপ খেলা দেখাতাম। এখন আর আগের মত সাপ নাই, তাই বানরের খেলা দেখাই। আর টুকিটাকি কবিরাজি করে যা পাই তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে। বাপদাদার এই পেশা ছেড়ে অন্য কাজ যে করবো তাও পারি না।
তিনি আরো বলেন, আমরা যাযাবর মানুষ, নিদিষ্ট কোন জায়গা নেই, ঝড়, বৃষ্টি ও শীতে আমাদের কষ্টের শেষ থাকেনা। আমাদের কথা কোন সরকারই ভাবে না। তবে বর্তমানে বেদে পল্লীতে আধুনিকতার ছোঁয়া কিছুটা পড়েছে। প্রতিটি তাবুতে রয়েছে উন্নত মানের সৌরবিদ্যুৎ।
ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে নয়ন তারা ( ২৬) বলেন, আমাদের সন্তানদের আমরা নিশ্চিত অন্ধকারের দিকে নিজেরাই ঠেলে দিচ্ছি। আমরা যাযাবর মানুষ আজ এখানে তো কাল ওখানে ।
বেদে দলটির শিশু শান্ত, সুমনা ও তমার সঙ্গে কুশল বিনিময়ে তারা সকলেই বলেন, ‘ভাল নেই, আমরা গরীব ঘরের সন্তান, ঠিকমত দু-বেলা খেতে পারি না, বাবা সারাদিন দুইশ থেকে তিন শ টাকা আয় করে তা দিয়ে কি জীবন চলে! আমাদের ঠিকমত খাবার জোটে না আবার পড়াশুনা করবো কিভাবে!
বেদে সম্প্রদায়ের সর্দার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শুধু আমরা নই, আমাদের মতই অনেক বেদে সম্প্রদায় আছে। তারাও আমাদের মত করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খোলা আকাশের নিজে তাবুতে বসবাস করছেন। আমাদের বেদে সম্প্রদায়ের যতই দিন যাচ্ছে ততই করুন পরিস্থিতি হচ্ছে। এসময় তিনি সরকারের কাছে স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি করেন ।

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com