শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৯:২১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার বালাসী থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে এক মাস আগে লঞ্চ পারাপারের ব্যবস্থা চালু হয়। বালাসীঘাটে তিনটি লঞ্চ রয়েছে। উদ্বোধনের পর একটি লঞ্চ বিকল হয়, বাকি দুটি নিয়মিত চলছে না। এ অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করানো হচ্ছে যাত্রীদের। যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌকায় গাদাগাদি করে যাত্রীরা পার হচ্ছেন। নৌকার ওপরে ছাউনি নেই। নেই নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন হচ্ছে। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে এ অবস্থা চলছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত ৯ এপ্রিল বালাসী-বাহাদুাবাদ রুটে লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বালাসীঘাটে তিনটি লঞ্চ রয়েছে। উদ্বোধনের পর একটি লঞ্চ বিকল হয়। বাকি দুটি নিয়মিত চলছে না। ফলে প্রতিদিন ছোট-বড় ১৫-২০টি নৌকায় যাত্রী পারাপার চলছে।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া গ্রামের কলেজ শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, লঞ্চ চালু করা হলেও এগুলো পুরোনো ও চলাচলের অনুপযোগী। নিয়মিত চলে না। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি নৌকায় ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় এসেছেন। কিন্তু নৌকায় অধিক লাভের আশায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি বেড়েছে।
একই গ্রামের মেহেদী মিয়া বলেন, ঈদে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। ট্রেনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। এ কারণে ঘরমুখী মানুষ নৌকার ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন। এ সুযোগে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তিনি ৩৫০ টাকা দিয়ে নদী পারাপার হয়েছেন। ঈদের আগেও একই ভাড়া দিয়ে তিনি বোনকে আনতে ঢাকায় গিয়েছিলেন। অথচ ভাড়া ২০০ টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে।
এই রুটে প্রায়ই গাইবান্ধা শহরের ডেভিড কোম্পানিপাড়ার ক্রীড়া সংগঠক আজহারুল হক জামালপুর যান। তিনি বলেন, বেশি ভাড়া নেওয়া হলেও নৌকায় নিরাপত্তামূলক সুবিধা নেই। নেই যাত্রীছাউনি কিংবা ছাতার ব্যবস্থা। রোদে পুড়ে যেতে হয়। এতে শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
বালাসীঘাটের ইজারাদার বাদল মিয়া বলেন, এই ঘাট তাঁর বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাঁর যাত্রী পারাপারের মেয়াদ রয়েছে। অথচ লঞ্চ মালিক সমিতি এ রুটে লঞ্চ চালু করে। কিন্তু সেই লঞ্চগুলো চলাচলের অনুপযোগী (ফিটনেসবিহীন)। অদক্ষ চালক, লঞ্চে হেডলাইট নেই। রাতে চলতে পারে না। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ঈদের কারণে নৌকায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। কারও কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না।
গাইবান্ধা বালাসী-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন বালাসীঘাট থেকে সকাল ৯টা, ১১টা, বেলা দুইটা ও বিকেল চারটায় লঞ্চ ছেড়ে যেত। জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা। প্রতিটি লঞ্চ ১৫০-২৫০ আসনবিশিষ্ট। যেতে সময় লাগত পৌনে দুই ঘণ্টা ও আসতে লাগবে আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু নাব্যতাসংকটের কারণে নিয়মিত লঞ্চ চালানো যাচ্ছে না। গত শনিবার সকালে দুটি লঞ্চ ডুবোচরে আটকে ছিল। লঞ্চ নিয়মিত চালাতে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে ড্রেজার চাওয়া হয়েছে। ড্রেজিং ছাড়া এ রুটে লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়।
গাইবান্ধা রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু করে। এপার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট, ওপারে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট। উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনে করে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন। এরপর তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন। ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন।
১৯৯০ সালে নদীর নাব্যতাসংকটের কারণে তিস্তামুখ ঘাটটি একই উপজেলার বালাসীতে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে যমুনা নদীতে নাব্যতা হ্রাসের কারণে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ফলে
২০০০ সাল থেকে এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় দাবির পরিপ্রক্ষিতে সম্প্রতি ঘাটের উভয় পাশে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌ টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর এ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়।