সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন

বন্যা নদীভাঙনঃ আয়-উপার্জনের সুযোগ সীমিত উত্তরাঞ্চলের কমছে না দারিদ্রতার হার

বন্যা নদীভাঙনঃ আয়-উপার্জনের সুযোগ সীমিত উত্তরাঞ্চলের কমছে না দারিদ্রতার হার

স্টাফ রিপোর্টারঃ উত্তরের জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর জেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙন, বন্যা, যোগাযোগ সমস্যার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আয়-উপার্জনমূলক কাজের সুযোগ না থাকায় দারিদ্রতা থেকে বের হতে পারছেন না এসব জেলার মানুষজন।
বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্য প্রবণ এলাকা উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশী গরিব মানুষ থাকে রংপুর বিভাগে। দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে বেশি এমন ১০টি জেলার মধ্যে ৫টিই রংপুর বিভাগে। সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কুড়িগ্রাম জেলায়। এই জেলার দারিদ্র্যের হার ৭০ দশমিক ৮শতাংশ। জেলার কোথাও কোথাও দারিদ্র্যের হার ৭৭ দশমিক ছাড়িয়ে গেছে। আর এই জেলার মধ্যে চর রাজিবপুর উপজেলায় বেশি। তাঁরা নিজেদের পরিবারে সদস্যদের পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারেন না। আবার দৈনন্দিন চাহিদা যেমন স্বাস্থ্য শিক্ষা বস্ত্র এসবেও খরচ করার সুযোগ কম।
এদিকে, দারিদ্র্যের হার দিনাজপুরে ৬৪ দশমিক ৩শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৬ দশমিক ৭শতাংশ, রংপুরে ৪৩ দশমিক ৮শতাংশ ও লালমনিরহাটে ৪২ শতাংশ।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের দিনমজুর তাহাজুল ইসলাম জানান, কৃষি শ্রম বিক্রি করে সংসার চালাই। কিন্তু প্রতিদিন কাজের সুযোগ না থাকায় বছরের বেশিরভাগ দিন কর্মহীন থাকতে হয়। এজন্য ধারদেনা করে সংসার চলে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের হামিদা বেগম জানান, অবস্থানগত কারণে প্রতিবছর বন্যা ও নদীভ্ঙানে বাড়িঘর স্থানান্তরিত করতে হয়, কিন্তু সরকার চরাঞ্চলের মানুষের জন্য কোন ধরণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে না, একারণে দারদ্রি মুক্ত হওয়ার কোন পথ খুজে পাওয়া যায় না।
মোল্লারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, চরের উন্নয়নে প্রয়োজন চরকেন্দ্রীক পরিকল্পনা করা। চরের জন্য উপযোগী বাড়ি-ঘর, কৃষি, চিকিৎসা ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে বলে তিনি জানান।
উত্তরাঞ্চলভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান এম.আবদুস্্ সালাম জানান বন্যা, নদীভ্ঙান, স্থানীয়ভাবে নারীদের নারী পুরুষের কাজের সুযোগ না থাকায় দারিদ্রতা থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পেড়েছে এই অঞ্চলের মানুষজনের। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের মানুষজনের বিষয়ভিক্তিক দক্ষতা না থাকায় ক্ষেত্রে কম মজুরীতে কাজ করতে বাধ্য হয়-একারণে পরিবারের প্রয়োজনীয় অর্থযোগান দিতে পারেন না। আবার প্রতিবছর বন্যা ও নদীভ্ঙানে আর্থিকভাবে ক্ষতিও অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন। এজন্য তিনি মনে করে এই অঞ্চলে মানুষজনের জন্য আয় উপার্জনমূলক কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
ফুলছড়ি উপজেলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার জানান, চরের অন্যতম সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা। সুস্কমৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যহত হয়। বিকল্প পদ্ধতিতে পণ্য ক্রয় বিক্রয় ও সাধারন মানুষজনের যোগযোগ সচল রাখতে না পারলে এই অবস্থার উন্নয়ন কঠিন হবে বলে তিনি জানান।
খানার আয়ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী গত ছয় বছরে সার্বিক দারিদ্র্যের হার বাড়ে ৩১শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৩শতাংশ হয়েছে।
অতি দারিদ্র্যের হারও কমেছে। ২০১৬ সালে অতিদারিদ্র্যের হাট ছিলো ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। বিবিএসের তথ্যমতে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ২০ লাক্ষ। সেই হিসাবে দেশে ৩ কোটি ৯৩ লাক্ষ দরিদ্র মানুষ আছে। অতি দরিদ্রের সংখ্যা ২কোটি ৮লাক্ষ।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com