সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:১৬ অপরাহ্ন

ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে বাতিল হওয়া পানিবাহী গাড়ি দিয়ে চলছে কার্যক্রম

ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে বাতিল হওয়া পানিবাহী গাড়ি দিয়ে চলছে কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টারঃ ১৩ বছর আগে বগুড়ায় বাতিল হওয়া মাত্র একটি পানিবাহী গাড়ি দিয়ে চলছে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন। এই স্টেশনে বিভিন্ন কাজে পাঁচটি গাড়ি থাকলেও নেই সমসংখ্যক চালক। দ্বিতীয় কল গাড়ির দুটি পাম্পের একটি নষ্ট, ছয় মাসেও সেটি সচল করা যায়নি। প্রথম কলগাড়ি ও সময়ের বিবেচনায় অচল। একটি অনাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তাতে নেই প্রেশার ও অক্সিজেন মেশিন। এমতাবস্থায় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে রংপুর কিংবা বগুড়া ফায়ার স্টেশনের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করতে হয় তাদের। বর্তমানে জনবল আর সরঞ্জামের এই তীব্র ঘাটতি নিয়েই চলছে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস।
সময়ের সঙ্গে গাইবান্ধা ফায়ার স্টেশনে লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া। দুর্যোগ-দুর্ঘটনা মোকাবিলা হলেও স্টেশন ভবন দেখলে মনে হয় সেটি নিজেই দুর্যোগকবলিত। জেলার সাত উপজেলার চারটি নদীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকলেও নেই ডুবুরি দল, নেই কোনো নৌ-অ্যাম্বুলেন্সও।
স্টেশনের কর্মকর্তারাই বলছেন, আধুনিক গাড়ি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং নতুন ভবন চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। স্বাধীনতার আগের একটি দ্বিতল ভবন ও একটি একতলা ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে এখানকার আবাসন ও দাপ্তরিক কার্যক্রম। স্টেশনটি এক যুগ আগে প্রথম শ্রেণির দাবিদার হলেও এখনো দ্বিতীয় শ্রেণির ফায়ার স্টেশন হিসেবেই রয়ে গেছে।
জেলার বাকি পাঁচ উপজেলার ফায়ার স্টেশনও দ্বিতীয় শ্রেণির। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ফায়ার স্টেশন সে মর্যাদাও পায়নি, এটি তৃতীয় শ্রেণির।
গাইবান্ধা ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন সূত্রে জানা যায়, যেকোনো দুর্যোগ ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় গাইবান্ধা স্টেশনে চার হাজার ৩০০ লিটার পানি ধারণক্ষমতার প্রথমকল পানিবাহী গাড়ি একটি, একটি দ্বিতীয় কল পাম্প টানা গাড়ি, এক হাজার ৮০০ লিটার পানি ধারণক্ষমতার একটি ফায়ার ফর রেসকিউ ইমার্জেন্সি টেন্ডার গাড়ি, একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি টোয়িং ভেহিক্যাল গাড়ি রয়েছে।
এসব গাড়ির মধ্যে পানিবাহী প্রথমকল গাড়িটি ১৯৮৫ সালের, যেটি বগুড়ায় ২৫ বছর ব্যবহারের পর বাতিলযোগ্য হলে ২০১০ সালে গাইবান্ধা স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে গাড়িটি একবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী। দুর্ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে পরিবহনের জন্য ১৯৯৮ সালে তৈরি অ্যাম্বুলেন্সটিও এই সময়ের জন্য বাতিল বলা চলে। এতে নেই অক্সিজেনের ব্যবস্থা, নেই প্রেশার মেশিন। এই অ্যাম্বুলেন্সের জন্য নেই নার্সিং অ্যাটেনডেন্টও। জেলা কর্মকর্তার জন্য একটি ফোটন গাড়ি থাকলেও গাড়িটির বিপরীতে চালকের পদ নেই।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের এমন বেহাল দশা হলেও প্রতিনিয়ত অগ্নিকা- ও দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে গাইবান্ধায়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বলছে, জেলায় গত আড়াই বছরে অগ্নিকা- ঘটেছে ১ হাজার ২৩২টি। একই সময়ে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১৫টি। নৌ-ডুবুরি ডাকতে হয়েছে, এমন ঘটনাও রয়েছে ১১টি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সক্ষমতা না থাকায় এসব অগ্নিকা- ও দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারছে না। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও এ অভিযোগ স্বীকার করে নিচ্ছেন। তাদের সক্ষমতার অভাবের জন্য তারা দায়ী করছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।
গত মঙ্গলবার গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ৮২ শতক জায়গায় ইটের প্রাচীরে ঘেরা দুটি দোতলা ও একটি একতলা ভবন। এর মধ্যে উপপরিচালকের ভবনটি ২০১১ সালের, বাকি দুটিই স্বাধীনতার আগে নির্মিত। পুরোনো ভবন দুটি ঘুরে দেখা যায়, কোথাও কোথাও ভবনের বিম ভেঙে পড়েছে। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ছে অনেক জায়গাতেই। ওয়াশ রুমের পার্টিশন রীতিমতো হেলে ও দেবে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা ফায়ার স্টেশনের একাধিক ফায়ার ফাইটার বলেন, কিছুদিন আগে গ্যারেজে ছাদের কিছু অংশ ভেঙে একজনের মাথায় পড়েছিল। পরে তা মেরামত করে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পুরাতন ভবন দুটির ছাদ বেয়ে পানি পড়ছে। কিছুদিন আগে গণপূর্ত অফিস থেকে মেরামত করে নেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ফায়ার ফাইটাররা আরও বলেন, আমরা মানুষের নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কাজ করি। অথচ আমাদেরই থাকতে হচ্ছে আতঙ্কের মধ্যে। আমরা নতুন ভবন ও আধুনিক গাড়ি ও সরঞ্জামের দাবি জানাই। এগুলো দেয়া হলে আমরা আরও দক্ষতার সঙ্গে দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় মানুষের পাশে থাকতে পারব।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নাছিম রেজা নীলু বলেন, আমাদের স্টেশনে পানিবাহী গাড়ি মাত্র একটি, যেটি বগুড়ায় ২৫ বছর ব্যবহৃত হওয়ার পর আমাদের দেয়া হয়েছিল আরও ১৩ বছর আগে। এখন এটি ব্যবহারের জন্য একেবারেই অনুপযোগী। ঘন ঘন বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয় এবং পুড়ে যায়। অনেক সময় কোথাও যেতে গিয়ে মাঝপথেই বিকল হয়। আরও অনেক সরঞ্জাম নেই। অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি কাজের না। স্টেশনের ভবন দুটিও অনেক প্রাচীন। ঝুঁকি নিয়েই আমরা আছি।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স গাইবান্ধার উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, শুধু সদর স্টেশন নয়, জেলার সাতটি স্টেশনের ২১টি পাম্পের মধ্যে সাতটিই নষ্ট। অথচ দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এসব পাম্প অত্যন্ত জরুরি। প্রতি মাসেই আমাদের জনবল ও সরঞ্জামের প্রতিবেদন পাঠাতে হয়, আমরা সবকিছু তুলে ধরে সেই প্রতিবেদন পাঠাই। আমাদের চাহিদার কথা জানিয়ে বারবার আবেদন করি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com