মঙ্গলবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ পলাশবাড়ী উপজেলায় প্রচীনতম একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদটিকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। কখন নির্মাণ হয়েছে, কে নির্মাণ করেছে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে মানুষের। অলৌকিভাবে সৃষ্টি হয়েছে বলেও বিশ্বাস কারো কারো।
মসজিদটি পলাশবাড়ী পৌরশহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে ডাঃ শাহিন ও মতিন মিয়ার বাড়ির সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। এই মসজিদটির বয়স কয়েক’শ বছর হবে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, এটি দেশের সবচেয়ে ছোট এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। যা প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন। কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তালিকাভূক্ত এ স্থাপনাটি এক কক্ষ বিশিষ্ট। এর উপরিভাগে একটি গম্বুজ এবং চার কোণায় রয়েছে ৪টি পিলার। প্রাচীন এ মসজিদটিতে এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন ইমামসহ চার থেকে পাঁচজন। মসজিদটির অভ্যন্তরে নামাজের জায়গা রয়েছে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে মাত্র ৬ ফুট।
নিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান ডিপটি বলেন, ধারণা করা হয় এটি নবাব সুজা-উদ-দ্দৌলার আমলের। বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও সরকারিভাবে মসজিদটির ইতিহাস উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯১ সালে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্বে আসেন আব্দুল মালেক। তৎকালীন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ছিলেন আব্দুর সবুর। তারা মসজিদটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং এটির ইতিহাস উদঘাটনের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সদস্যরা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করেন এটি নবাব সুজা-উদ-দ্দৌলার আমলের। কারণ নবাব সুজা-উদ-দ্দৌলার আমলে নির্মিত ওই মসজিদ দুটোর আদল হুবহু অনুকরণ করে তৈরী করা হয়েছে পলাশবাড়ীর প্রাচীন এই একগম্বুজ বিশিষ্ট সবচেয়ে মসজিদ।
স্থানীয় আব্দুল মতিন মন্ডল জানান, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করা হয়। ২০১৩ সালের ২ জুন মসজিদটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে মসজিদটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্বপাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। যেখানে এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীন মসজিদটি দেখতে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন। তিনি নবনির্মিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন প্রাচীন এ মসজদটি রক্ষায় সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ডাঃ শাহিন সরকার বলেন, বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদটিতে এখনও নামাজ আদায় করা সম্ভব।
পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকসেদ চৌধুরি বিদ্যুৎ বলেন, আমি ছোটোবেলা থেকে মসজিদটি দেখে আসছি। দূর-দূরান্ত থেকে এখনও অনেক মানুষ ওই মসজিদটি দেখতে আসেন।