শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
মোশারফ হোসেন বুলু সুন্দরগঞ্জ থেকেঃ সুন্দরগঞ্জে নদী ও খাল খনন না করা আর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচ প্রকল্প কোন কাজে আসছে না। উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাতগীরি এলাকায় ঘাঘট নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। এতে অন্তত চারশ বিঘা জমি চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী ও খাল পুর্নখনন করা না হলে বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় সুবিধাভোগীরা।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত এ উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমানোর স্বার্থে জমি চাষাবাদের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গাইবান্ধা। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ হ্রাস এবং সেচ সঙ্কট সমাধানে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমিয়ে নদী ও খাল থেকে পানি এনে জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎচালিত লো লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন এবং এলএলপির অধিভুক্ত সেচ এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির পাইপলাইন নির্মাণ করে বিএমডিএ। এতে সেচ সঙ্কট মিটাতে সুফল পায় শতাধিক কৃষক। কিন্তু চলতি শুষ্ক মৌসুমে ঘাঘট নদীতে পানি না থাকায় এলএলপির সেচ প্রকল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বন্যা ও উজানের ঢলে পলিমাটি জমে ভরাট হয়েছে নদী। এছাড়াও নদী ভাঙনের কারনে পানির স্তর ও গতিপথ অন্যদিকে বেঁকে গেছে। ফলে প্রকল্প এলাকায় পানির স্তর না থাকায় এবারের ইরি ধান আবাদে পানি সেচ দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘাঘট নদী ও খাল থেকে তিন কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ৩টি পানির পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। পৃথক দুটি এলএলপি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে নদী থেকে পাইপযোগে পানি নিয়ে আসা হত। ৩টি পাইপলাইনের মধ্যে একটি লাইনে ৭টি পয়েন্ট রাখা হয়েছে, এতে উপজেলার দক্ষিন সাতগীরি ও সাতগীরি ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষকরা এ লাইন থেকে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন। ওই এলাকায় নির্মিত পন্টুনে সেচের বিল পরিশোধের জন্য দুটি প্রিপেইড মিটার লাগানো হয়েছে। বিঘা প্রতি ১২০০ টাকা নির্ধারিত মূল্য জমিতে সেচ সুবিধা ভোগ করেন স্থানীয় দেড় শতাধিক কৃষক।
এদিকে, গত ইরি মৌসুমে নদী থেকে পানি এনে জমিতে চাষাবাদ করা হলেও এবার শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। ঘাঘট নদীর প্রকল্প এলাকায় খনন না করায় শুকিয়ে গেছে পানি। ঘাঘট নদীর প্রশস্থ গড়ে প্রায় ৪০ ফুট ছিল। আর এখন রয়েছে মাত্র ২৫ ফুট। এবং গভীরতা প্রায় ২০ ফুট থাকলে এখন রয়েছে মাত্র ৯ ফুট। নদীর দুধারের মাটি বৃষ্টির পানিতে নেমে ভারাট হওয়ায় আকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। জলাশয় এলাকায় চর জেগে ওঠায় পানির নাগাল পাচ্ছেনা বরেন্দ্র সেচ প্রকল্প। এখন পর্যন্ত কোন জমিতে ধানের চারা রোপন করতে পারেনি। এমনি ওইসব জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষাবাদ করা হলেও পানির অভাবে পতিত রাখা হয়েছে জমি গুলো। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সুবিধাভোগীরা। আর চারশ বিঘা জমিতে ধানের চাষাবাদ করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে এ এলাকার কৃষকেরা। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বরেন্দ্র এলএলপি থেকে জমিতে সেচ দিয়ে বেশ সাশ্রয় ও সুফল পেয়েছি। ১৬০ টাকার বিনিময়ে ১ ঘণ্টায় ৪ বিঘা জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা অন্য গভীর নলকূপ থেকে সম্ভব হয়নি। কিন্তু ঘাঘট নদী খনন না হওয়ায় এলএলপির সেচ প্রকল্পে এ বছর চাষাবাদ করতে পারব কিনা জানিনা। তাদের দাবি, প্রকল্প এলাকায় দ্রুত ঘাঘট নদীর পুনঃখনন করে পানির স্তর সংরক্ষণ করার।
বরেন্দ্রর সেচ সমিতির সভাপতি ও ইউপি সদস্য রানু মিয়া বলেন, নদীতে এখন পানি নেই। পলিমাটি জমে নদী ভরাট হওয়ায় এ বছর জমিতে সেচ দিতে পারব না। এতে প্রায় চারশ বিঘা জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হবেনা।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী এজাদুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকায় দুটি এলএলপি সেচ রয়েছে। সেচ দুটি স্থানীয় ঘাঘট নদী থেকে পাইপ দিয়ে পানি এনে জমি চাষাবাদ করা হয়। তবে নদীর যেখানে প্রকল্প করা হয়েছে সেখানে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ দেয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা নদীর ওই এলাকা পুনঃখনন করার জন্য উদ্যােগ গ্রহন করেছি।