শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সাঘাটা উপজেলা চর দিঘলকান্দি গ্রামের মনির আলী সরকার। চলতি মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে মরিচ ও ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে পাঁকা মরিচ ও ভুট্টা উঠতে শুরু করেছে, কিন্তু সমস্যা পড়েছেন এগুলো বিক্রি করা নিয়ে। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকটে তার বাড়ি থেকে পশ্চিম দিকে বিক্রয় কেন্দ্র সাঘাটা হাটের দুরুত্ব ১০ কিলোমিটার। উত্তরে ফুলছড়ি হাট ১৬ কিলোমিটার। আর পূর্বদিকে জামালপুরের ঘুঠাইল হাটের দুরত্ব ১২ কিলোমিটার। এই তিনটি হাটে যেতে হলে তাকে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বালুরচর পার করে নৌকা ও নৌকা এরপর ভ্যান অথবা ঘোড়ার গাড়িতে হাটে পৌঁছাতে হয়। তবে, হাটে পৌঁছানোর জন্য চর থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট বাহন না থাকায় চরম বিপাকে রয়েছেন এই চাষী মনির আলী সরকার। উৎপাদন খরচ যোগান ও শ্রমিক মজুরী দিতে এক মন ভুট্টা অথবা মরিচ হাটে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যেতে তিন দফা পরিবহন পরিবর্তনে ব্যয় হচ্ছে মনপ্রতি অন্ততপক্ষে ২ থেকে ৩শ টাকা। তাও আবার ইচ্ছে করলেও তিনি চাহিদা মতো বিক্রিও করতে পারছেন যোগাযোগ ও পরিবহন সংকটে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলায় চলতি মৌসুমে চরাঞ্চলে ভুট্টা প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর এবং মরিচ চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে। কুড়িগ্রাম জেলায় ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা এবং ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ ও ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। অনূকুল আবহওয়ায় ফলনও ভাল হয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি গ্রামের নুর ইসলাম জানান, ভুট্টার উৎপাদন ভাল হয়েছে, তবে সংরক্ষণ ও বিক্রি নিয়ে চিন্তিত। নদীতে পানি না থাকায় হাট-বাজারে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে পরিবহন খরচ দিতেই সব টাকা শেষ হয় বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, যদি এগুলো নদীতে পানি আসা পর্যন্ত সংরক্ষণ করি তাহলে ওই সময়ে পাইকারেরা মূল্য কমিয়ে দেয়।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান সাইদুজ্জামান জানান মূল ভূখন্ড থেকে চরাঞ্চলগুলো এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে, কৃষিভিত্তিক উৎপাদন বাড়লে পরিবহন সুবিধা সৃষ্টি না হওয়ায় চাষীরা কাঙ্খিত লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সাঘাটার ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান জানান, চর থেকে সুষ্কমৌসুমে ভুট্টা মরিচ ক্রয় করে তা বাজার দর অনুযায়ী বিক্রি করলে লাভের চেয়ে লোকসানের সম্ভাবনাই বেশি। এছাড়াও তিনি বলেন ভূট্টা মরিচ মৌসুমে হাটে কম বেঁচা-কেনা হচ্ছে-কারন হিসাবে তিনি পরিবহন সমস্যার চিত্রই তুলে ধরেন।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অষ্টমি চরের আবুল হোসেন জানান, বাদামের ফলন ভাল হলেও নদীতে পানি না থাকায় চিন্তায় যোগাযোগ সমস্যায় চিন্তায় ঘুম আসেনা। এদিকে ধার-দেনা করে জমি চাষ করলেও বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি বিপনন অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, চরাঞ্চলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে, সেই হিসাবে চারঞ্চলে যোগাযোগ ও মার্কেটিং সুবিধা বাড়েনি বলে। এজন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে চরাঞ্চলে সংরক্ষণাগার ও বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজনীয়তার কথা জানান।
চরাঞ্চলের কৃষিপণ্য প্রকৃত মূল্যে বিক্রিতে সুষ্কমৌসুমে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু, সংরক্ষণাগার ও মার্কেটিং সুবিধা চালুর উদ্যোগ নিবে সরকার এমন দাবী চরাঞ্চলের চাষীদের।