শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৮:০৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সমাজ, নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যর জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর জেনেও অতিরিক্ত লাভের আশায় পরিবেশ দুষণকারী ফসল তামাক চাষ করছেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চর এলাকার চাষিরা। লাভজনক ও সহজে বাজারজাত করার সুবিধা থাকায় তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ছেন তারা। একদিকে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে লাভজনক ও পরিবেশ বান্ধব ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। অন্যদিকে টোব্যাকো কোম্পানীর কর্মীরা বীজ-সার-বালাইনাশক-নগদঅর্থসহ বিভিন্নমূখী লোভনীয় সহায়তা ও অফার পেয়ে তামাক চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এখানকার চাষীরা। উচ্চমূল্য এবং বিপণনের সুবিধা ও নিশ্চয়তার কারণে প্রতি বছরই পরিবেশের শত্রু এ ফসলটির চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবারের রবি মৌসুমে উপজেলার দরবস্ত, সাপমারা, তালুককানুপুর, রাখাল বুরুজ, মহিমাগঞ্জ, হরিরামপুর, নাকাইহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তামাক চাষ হয়েছে। নদী তীরবর্তী চর এলাকায় প্রতি বছরই বেড়েই চলেছে তামাক চাষ। যে সব জমিতে আলু, ধান ও ভুট্টার চাষ করে ব্যাপক ফলন পেলেও সঠিক দাম না পাওয়ার অজুহাতে কৃষকরা এ সব ফসল চাষ না করে কয়েক বছর ধরে তামাক চাষ শুরু করেছেন।
উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের মেরী গ্রামের তামাক চাষী রুবেল মিয়া বলেন, আলু, ভুট্টা সহ বেশ কিছু ফসলের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা নেই। এমনকি ভুট্টানির্ভর কোন শিল্প কারখানা গড়ে না ওঠায় প্রতিবছরেই ভুট্টা চাষে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। আবার আলু ও ভুট্টার দাম ওঠা-নামা করায় আর্থিক ভাবে লোকসানের মুখেও পড়তে হয় চাষীদের। আর তামাক কোম্পানির কর্মীরা বাড়িতে এসে ঋণ ও বিনামুল্যে বীজ, সার-কীটনাশনক সরবরাহ করে যায়। এ ছাড়াও কর্মকর্তারা নিয়মিত চাষীদের মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ ও ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। যে কারণে তামাক চাষ বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
একই গ্রামের তামাকচাষী মুকুল মিয়া বলেন, তামাক পাতা বিক্রির সময় হলে নিজস্ব পরিবহণে চাষীর বাড়ী থেকে অথবা নির্দিষ্ট স্থান থেকে তামাক কোম্পানীর কর্মকর্তারা তামাক ক্রয় করে। আর তামাকের মূল্য পরিশোধে চাষীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরে তামাকের টাকা দিয়ে দেয় তারা। ফলে অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অধিক মূল্য ও বিক্রির নিশ্চয়তা পেয়ে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা।
আবার বাবলু মিয়া নামে এক সচেতন কৃষক বলেন, আগে তামাক চাষ করলেও বর্তমানে ক্ষতির কথা বিবেচনা করে তামাক চাষ বন্ধ করে অন্যান্য ফসল চাষ করছি। তামাক চাষ করলে ভাত খাওয়ার রুচি কমে যায়, হাতে পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এমন কি আমার শ্বাসকষ্টও হয়েছিল।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার সৈয়দ রেজা-ই- মাহমুদ জানান, তামাক চাষ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং তামাক চাষের কারণে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। আবার যে সব চাষী তামাক চাষ করছেন, তাঁরা নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের ভুলের কারণে। উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সামান্য পরিমাণ জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। আমরা ওই চাষীদের তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা, আলু, সব্জীসহ অন্য কোন লাভজনক ফসলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।