সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামবাসীর স্বপ্নের সেতু এখন দৃশ্যমান

গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামবাসীর স্বপ্নের সেতু এখন দৃশ্যমান

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর খেয়াঘাটে তিস্তার উপর একটি সেতু নিমাণের দাবি দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মানুষের বহুদিনের প্রতীক্ষার পর স্বপ্নের সেই তিস্তা সেতু এখন দৃশ্যমান। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে দুই জেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। সেই সঙ্গে এক মাইলফলকে পা রাখতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর আগে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বে ছিল না এলজিইডি। সৌদি সরকারের অর্থায়নে আর এলজিইডির তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামবাসীর। চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল সেতু নির্মাণকাজ। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুর-চিলমারি তিস্তা পিসি গার্ডার তিস্তা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন। সৌদি সরকারের অর্থায়নে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাট এলাকায় ১ হাজার ৪৯০ মিটার (প্রায় দেড় কিলোমিটার) দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের এই সেতুটির নির্মাণকাজ করছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। জানা যায়, তিস্তা সেতুর পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। তবে, স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে ২০১২ সালে। ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয় নির্মাণের। ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম সভায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটি নির্মাণে (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। শিডিউল মোতাবেক ২০২৩ সালে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেতুটিকে ঘিরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক উন্নয়ন, সংশ্লিষ্ট সড়কে ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ, মাটির কাজ এবং জমি অধিগ্রহণসহ গোটা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। দেশে এর আগে কখনো এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায়নি এলজিইডি। কুড়িগ্রামের চিলমারি, রাজীবপুর ও রৌমারী এবং গাইবান্ধা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল হরিপুর-চিলমারি তিস্তা সেতুর। লাখো মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশার সঙ্গে যোগ হয় হাজারো কর্মীর হাত ও প্রকৌশলীদের মেধা। একেকটা পিলার বসানো, পিলারের পিয়ার ক্যাপ এবং পাইলিং সবকিছুতেই গর্ব খুঁজতে থাকে এ অঞ্চলের মানুষ। ৩১ ¯প্যানবিশিষ্ট মূল সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুর দুপাশে নদী শাসনের কাজ, ৩০টি পিলার ও ১৫৫টি গার্ডার স্থাপন, দুই পাশে এবাটমেন্ট নির্মাণ এবং অন্যান্য কাজ চলছে পুরোদমে। এছাড়াও সেতুটির দুই পাশে এক্সেস সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে সেতু পয়েন্ট থেকে বেলকা বাজার হয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর, সেতু পয়েন্ট থেকে পাঁচপীর বাজার এবং পাঁচপীর বাজার থেকে ধর্মপুর হয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার হাট-লক্ষ্মীপুর বাজার, হাট লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে সাদুল্যাপুর উপজেলা সদর হয়ে ধাপেরহাট বাজারে গিয়ে রংপুর-বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে সংযোগ। ৮০ কিলোমিটার এ সড়ক নির্মাণ পরিকল্পনায় আরও আছে সুন্দরগঞ্জের শোভাগঞ্জ বাজার থেকে পাঁচপীর বাজার পয়েন্ট, মাঠেরহাট থেকে বড়–য়াহাট ওয়াপদা বাঁধ ও মাঠেরহাট থেকে সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর সড়কের উন্নয়নকাজ। ১৮ মিটার প্রশস্থ করা হচ্ছে সবকটা সড়ক। এ জন্য জমি অধিগ্রহণও স¤পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে। শুধু তাই নয়, সড়কগুলোতে নতুন করে ৫৮টি বক্স কালভার্ট এবং ৯টি আরসিসি সেতুও নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি, ৪৮ মিটার দীর্ঘ দুটি, ২০ মিটার দীর্ঘ দুটি, ১৬ মিটার দীর্ঘ একটি এবং ১২ মিটার দীর্ঘ তিনটি সেতুর নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে স¤পন্ন হয়ে গেছে গোটা প্রকল্পের ৭৫ ভাগ কাজ। বাকি কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা সেতুসহ গোটা প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। সে অনুযায়ী কাজ চলছে। পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। মূল সেতুর ৩০টি পিলারসহ ক্যাপ স্থাপন শেষ হয়েছে। ১৫৫টি গার্ডারের মধ্যে ৭৫টির সংযোজন কাজ স¤পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোরও কাজ চলছে। অপরদিকে ৩১টি ¯প্যানের মধ্যে ১৪টি ¯প্যান স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সড়ক উন্নয়নের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। তিনি আরও বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুরসহ ৫টি উপজেলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর ও সদর উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষের রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী সরাসরি বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com