সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ সাঘাটা, পলাশবাড়িসহ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলার গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ নামে ভাইরাসজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। ২০১৯ সালে জেলায় এ রোগ প্রথম দেখা যায় বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার এর প্রকোপ বেশি। বিশেষ করে সাঘাটা উপজেলার চিত্র ভয়াবহ। এরই মধ্যে জেলায় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক গরু-ছাগল মারা গেছে।
এ রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হলে প্রথমে চামড়া ফুলে গোটা হয়ে যায় এবং জ্বর আসে। তারপর আক্রান্ত গবাদিপশুর চামড়ায় ফোসকা পড়ে ঘায়ের মতো হয়ে যায়। অনেক সময় পায়ে পানি জমে ঘা হয়ে যায়। আক্রান্ত পশুর খাবারের চাহিদা কমে আসে। কয়েকদিনের মধ্যে সারা শরীরে ঘা হয়ে মারা যায়।
জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে শুরু করে। তিন বছর থেকে একই সময়ে এ রোগের বিস্তার দেখা যাচ্ছে। এলাকার মধ্যে একটি আক্রান্ত হলে অন্য পশুও আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক গবাদিপশু মারাও গেছে। গবাদিপশুর এ রোগ নিয়ে স্থানীয়রা এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঘুড়িদহ গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, গরু-ছাগলের এ ধরের রোগ আগে এই এলাকায় দেখা যায়নি। হঠাৎ গরুর শরীরে গোটা হয়। পরে জ্বর আসে। অনেক চিকিৎসা করছি। ছয়টা গরুই এ অবস্থা। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার দুটি গরু মারা গেছে। বাকি চারটা গরুও অসুস্থ।
একই গ্রামের ফজল মিয়া বলেন, পাঁচটি গরু অসুস্থ। দেড় বছরের বাছুরটার অবস্থা খুব খারাপ। দুধ খেতে পারে না। নাক, মুখ, সর্ব শরীরের ঘা। কী চিকিৎসা করি?
এসময় রাশেদা বেগম নামে এক নারী বলেন, চিকিৎসা করে কী লাভ হলো? টাকাও গেলো, গরুটাও মারা গেলো।
ওই গ্রামের আরিফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গ্রামে রোগটি মহামারি আকার ধারণ করছে। অথচ সরকারি কোনো পশুচিকিৎসক আসেনি। যদি ডাক্তার আসতো, তবে গরুগুলো হয়তো মারা যেত না। শুনেছি চিকিৎসা করলে এই রোগ ভালো হয়।
ঘুড়িদহ গ্রামের শামিমা বেগম বলেন, দুটি গরু ও ছয়টি ছাগলের মধ্যে অসুস্থ হয়ে চারটি ছাগল মারা গেছে। বাকিগুলোর অবস্থা আশঙ্কাজনক। যে কোনো সময় মারা যেতে পারে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, একাধিকবার সরকারি পশু ডাক্তারকে জানানোর পরও দেখতে আসেনি তারা।
পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ি এলাকার চান মিয়া বলেন, সুস্থ গরু, সন্ধ্যায় দেখি জ্বর আর গা ফুলে যাচ্ছে। সকাল হতেই সমস্ত শরীরে গুটি গুটি হয়ে ঘায়ের মতো হয়েছে। আশপাশে গ্রামেও অনেক গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায়, এসব ভাইরাস আক্রান্ত গরু সস্তায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেগুলো কসাইরা জবাই করে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাছুদার রহমান সরকার বলেন, জেলায় বিচ্ছিন্নভাবে লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়িয়ে পড়েছে। এ রোগে গবাদিপশুর মৃত্যুর আশঙ্কা কম। তবে দুধের উৎপাদন ও চামড়ার গুণগত মানের ওপর প্রভাব ফেলে। এরই মধ্যে আক্রান্ত ২৮৭টি গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মশা-মাছির মাধ্যমে এ রোগ ছাড়ায়। মশা বা মাছি আক্রান্ত গরুর গায়ে বসে, অন্য একটি সুস্থ গরুর গায়ে বসলে, সেই গরুটিও আক্রান্ত হয়ে যায়। তাই এই রোগ প্রতিরোধে গরুগুলোকে মশারির ভেতরে রাখা ও বাড়ির আশপাশ (গোয়াল ঘর) পরিষ্কার রাখতে বলা হচ্ছে। এছাড়া এ রোগের বিস্তার ঠেকাতে স্থানীয়দের মাঝে সচেতনতার জন্য লিফলেট বিতরণ ও উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।