রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:২৮ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গেল মৌসুমে খরার কারণে আউশের (বর্ষালীর) আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতি বছরেই সরকারিভাবে সার ও বীজ দেয়া হয়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
চলতি অর্থ বছরের (২০২২-২০২৩) গেল মৌসুমে অতি খরার কারণে বর্ষালীর (আউশ) কাঙ্খিত চাষাবাদ ও ফসল উৎপাদন করতে পারেননি গাইবান্ধার কৃষকরা। ফলে বর্ষালী চাষাবাদ ও ফসল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে গাইবান্ধার কৃষি বিভাগ।
অন্যদিকে এ মৌসুমে খরা-বন্যা ও খরা প্রকৃতির এ সমীকরণে আমন চাষাবাদেও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন জেলার সাত উপজেলার কৃষকরা। ইতোমধ্যে আগস্টের শেষ সময়ের বন্যায় সরকারি হিসেবেই জেলায় দুই হাজার ৩৭০ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, ইরি-বোরো ও আমন চাষের মাঝামাঝি সময়ে চাষাবাদ হয় আউশের। যা বর্ষালী নামে পরিচিত। স্বল্প খরচ দুর্যোগের ঝুঁকি কম থাকায় বর্ষালীতে লাভবান হয় কৃষকরা।
তবে গত মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে চাষ হয়েছে কম। উপযুক্ত জমি পড়ে থাকা ও অতি খরার কারণে ফসলের কাঙিক্ষত উৎপাদন না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি বলে জানায় গাইবান্ধার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষকরা জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় সেচের পানিতে আমন চাষ করতে হচ্ছে তাদের। একদিকে কৃষি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে সেচ ও নিড়ানীতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে তাদের। এর ওপর কাঙিক্ষত ফসল উৎপাদন না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।
এ ছাড়া আগস্টের শেষ সপ্তাহের বন্যায় জেলার গোবিন্দগঞ্জ ছাড়া অপর ছয় উপজেলায় ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় স্বচ্ছল কৃষকরা দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত খরচে আমন লাগাচ্ছেন। বর্গাচাষী ও যেসব কৃষক আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল তাদের জমি অনাবাদিই পড়ে থাকবে। ফলে নানা কারণে আমনেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষক।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে জেলার সাত উপজেলায় (খরিপ-১) আউশ মৌসুমে ১৪ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে বর্ষালীর চাষাবাদ হয়েছে। এ মৌসুমে যার লক্ষ্যমাত্র ছিল ১৯ হাজার ১৭০ হেক্টর জমি। সে হিসেবে ৪ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে হয়নি আউশের আবাদ। উৎপাদন হয়নি ৯ হাজার ১৮৬ টন ধান।
এ ছাড়া কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলার সাত উপজেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ মৌসুমের আমন রোপনের শেষ দিনে জেলায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৪ হেক্টর রোপনকৃত জমির পরিমাণ দেখিয়েছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে ২৬ আগস্ট ২০২৩ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি ও উজানের ঢলের সৃষ্ট বন্যায় ছয় উপজেলায় তিন হাজার ৬৭৯ জন কৃষকের দুই হাজার ৩৭০ বিঘা (৩১৬ হেক্টর) জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরজমিনে সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের রেজিয়া বাজার ও মাস্টারের বিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমন চাষাবাদের অনন্ত ৩০০ বিঘা জমির ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো জমির থোপের (চারাগাছ) এক থেকে দুইটি করে ধানগাছ দূর্বল অবস্থায় বেঁচে আছে।
সেখানে দেখা যায়, এক জমিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অন্য জমি থেকে পানি ছিটিয়ে গাছ বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছেন গৃহিনী লাকী খাতুন। আবার কোনো জমিতে নতুন করে দ্বিতীয় দফায় চারা রোপন করা হচ্ছে। ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হওয়া কিছু জমি অনাবাদিই পড়ে আছে।
ওই এলাকার কৃষকরা জানান, রোপনের ১৫ দিনের মধ্যেই পানিতে ডুবে এসব ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর স্বচ্ছল কৃষকরা আবারও নতুন করে হাল দিয়ে, বীজ কিনে ওই পানিতেই ধান রোপন করছেন। বাকি সব ওই অস্থায় পড়ে আছে।
তাদের অভিযোগ, এ এলাকার প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ক্ষেত নষ্ট হলো। অথচ কৃষি বিভাগের কেউই একদিনও খোঁজ নেয়নি। পরামর্শ কিংবা সহযোগিতার কথাও জানাইনি।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে ধার-দেনা করে কৃষকরা আবাদ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঠিক তালিকা করে কৃষি প্রণোদনাসহ আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন বলে দাবি জানান কৃষকেরা।
জমিতে পানি ছিটিয়ে সেচ দেয়ার সময় লাকী বেগম বলেন, আমরা কৃষি কাজ করে খাই। কত কষ্ট করে ছয় বিঘা জমিতে (বর্গা) আবাদ করছিলাম। গাড়ার (রোপনের) এক সপ্তাহের মধ্যেই সব বানে (বন্যায়) খেয়ে গেছে। পড়ে আবার লাগালাম কিন্তু এখন খরায় পুড়ে যাচ্ছে।
রেজিয়া মার্কেট এলাকার বর্গাচাষি আব্বাস মিয় বলেন, ১৬ হাজার টাকা ধার-দেনা করে দুই বিঘা জমিতে আমন ধান গারছিলাম (রোপন)। বানের পানিতে ডুবে সব নষ্ট হয়ে গেছে।