শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার এ কথাগুলো এখন সর্বাংশে সত্যি হয়ে উঠছে গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকায়।
এক সময় পুরুষ শাসিত সমাজের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারনে নিষ্পেষিত হয়ে যায় নারীর অধিকার ও অবদান । ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয় তাদের প্রতিভাকে । কিন্তু এদেশে যে জন্ম হয়েছিল বেগম রোকেয়ার মতো মহীয়সী নারীর। যার হাত ধরে নারীরা শিখেছে কি করে পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে স্বাধীন হওয়া যায় । নারীরা এখন সব জায়গায় স্বাধীন ভাবে বিচরণ করছে । শুধু অফিস আদালতেই নয় নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি মাঠেও কৃষি কাজ করছে । বর্তমান কৃষি এখন নতুন সঞ্জীবনী লাভ করছে নারীর হাতের ছোয়ায়।
গাইবান্ধার বিভিন্ন এলাকার জমিতে নারীদের কোমল হাতের কঠোর ছোয়া আর ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমে দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছড়াচ্ছে কৃষির আবাদ। একটা সময়ের গাইবান্ধার অবলা, ঘরকুনো ও অসহায় বিশেষণধারী নারীরাই এখন পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করে বদলে দিচ্ছে কৃষি; সেইসঙ্গে দেশকে। সংসার আর সন্তান পালনকারী নারীদের হাতেই গড়ে উঠেছে আধুনিক কৃষি ।
এ অঞ্চলের নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশি পুরোদস্তুর কাজ করছেন। বিভিন্ন কাজে পুরুষকে সহযোগিতা করছেন। সংসারে অভাব-অনটনে ঘোঁচাতেও রাখছেন ভূমিকা। প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার থেকে শুরু করে রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সবখানে নারীদের সমান বিচরণ। সে দেশের অবহেলিত নারীরা সংসারে পুরুষের ওপর কেন শুধু নির্ভর করে থাকবেন। এ ভাবনাই এখানকার নারীদের উদ্বুদ্ধ করছে কাজে, সংসার সামলানোর অংশীদারিত্বেও।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার হাতিয়ার বিলে দেখা যায়, কাক ডাকা ভোরে শরীরে চাদর জড়িয়ে নারীরা চলে এসেছেন মাঠে। খেতে বোরো ধানের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করছে। কাজে তার এতই মগ্নতা, অন্যের সঙ্গে কথা বলারও ফুসরত নেই তাদের।
মাঠে কাজ করা নারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারী হিসেবে নয় বরং সংসারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেই মাঠে কাজ করছেন তারা। কেউ নিজের জমিতে, কেউবা অন্যের জমিতে কাজ করছেন। তবে পুরুষদের তুলনায় পারিশ্রমিক একটু কম বলে কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে তাদের মনে।
তারা জানান, মাঠে একজন পুরুষ যে পরিমাণ কাজ করেন, একজন নারীও তার থেকে কোনো অংশে কম নন। তাই পারিশ্রমিক যদি সমান হতো তবে কাজে আরও বেশি উৎসাহ পেতেন তারা। কৃষিকাজ করতে কেমন লাগে?-এমন প্রশ্নে অধিকাংশ নারীরই সরল উত্তর-সংসারের অন্য কাজের মতোই কৃষিকাজ তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আর এর মাধ্যমে সংসারে কিছুটা আর্থিক আয়-উন্নতিও হয়। তাই এটাকে খাটো করে দেখার কিছু নেই।
খেতে কাজ করতে গিয়ে সংসারে কোনো বঞ্চনার শিকার হতে হয় কী না?- এর জবাবে তারা বলেন, যেহেতু এর মাধ্যমে সংসারে দু’পয়সা আসে সেজন্য খুব বেশি একটা সমস্যা হয় না। শুধুমাত্র বাচ্চা-কাচ্চাদের দিকে ঠিকভাবে খেয়াল রাখা কষ্ট হয়ে যায়।
গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ করে চরাঞ্চলের নারীরা আরো ব্যাপকভাবে কৃষির সাথে জড়িত তারা শুধু ধান ক্ষেতে নয় ভুট্টা মরিচ বাদামসহ বছর জুড়েই কর্মব্যস্ততার মাঝে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে দিন হিসেবে নারী শ্রমিকরা পান ২৫০-৩০০ টাকার মতো। কাজ করতে হয় সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তানজিমুল হাসান বলেন, গাইবান্ধায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বা অন্য কোন কলকারখানা নাই, যা থেকে নারীরা কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন। তাই এখানকার নারীরা কৃষিকাজ করেই টাকা উপার্জন করছেন। তিনি আরো জানান, কৃষি সম্পর্কে জানাতে ও কৃষিকাজে আগ্রহ বাড়াতে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কৃষি প্রদর্শনীতে হাওরের নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।