সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:০৫ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা জেলা শহরের ভেতর দিয়ে চলা চার লেনের সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে সাতটি সংগঠন। এসব সংগঠন ও এক আইনজীবীর পক্ষ থেকে গত সোমবার জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স।
একই বিষয়ে গত ১৬ জুন অভিযোগ দেন গাইবান্ধার সচেতন নাগরিকেরা। সাত সংগঠন ও আইনজীবীর লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রথম দিকে দিনের বেলা কাজ করা হতো। কিন্তু দুই মাস ধরে প্রতিদিন রাত ১০টার দিকে কাজ শুরু করা হয়, চলে ভোররাত পর্যন্ত। এ সুযোগে সওজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। রাতে নর্দমা পাকা করার জন্য চিকন (নন গ্রেড) রড বিছানো হচ্ছে। ঢালাই কাজেও নিম্নমানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা তড়িঘড়ি করে রাতে কাজ করেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক নির্মাণে নিচে ও ওপরে নিম্নমানের খোয়া ও বালু দেওয়া হচ্ছে। দুবার করে খোয়া ও বালু দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দেওয়া হচ্ছে একবার। এ ছাড়া শহরের পুরোনো জেলখানা এলাকায় নর্দমা করা হয়েছে ছয় ফুট দক্ষিণে সরিয়ে। এতে সড়ক সংকুচিত হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল মতিন বলেন, ইতিমধ্যে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ডেকে বলেছি, নিম্নমানের সামগ্রী যেন ব্যবহার করা না হয়। ঠিকাদার যেন গুণগত মানের সামগ্রী ব্যবহার করেন।
অভিযোগকারী ও গাইবান্ধা জেলা এ্যাডভোকেট বার এসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজের কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।
সওজ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সওজের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময় বাড়ানো হয়।
সামগ্রী ব্যবহারের সঠিক অনুপাত জানতে চাইলে গাইবান্ধা সওজের একটি সূত্র জানায়, সড়ক নির্মাণ প্রাক্কলন অনুযায়ী, কাজের প্রথম স্তরে (সাব-বেজ) ভালো মানের খোয়া ও বালুর অনুপাত শতকরা ৭০ঃ ৩০, কার্পেটিংয়ের নিচের স্তরে (ডব্লিউ বিএম) ভালো মানের ভাঙা পাথর ও বালুর অনুপাত শতকরা ৭৫: ২৫, নর্দমা নির্মাণে ১২ মিলিমিটার ব্যাসের রড, ঢালাইকাজে পোর্টল্যান্ড (সিম-১) সিমেন্ট ব্যবহার এবং পাথর, বালু ও সিমেন্টের অনুপাত অবস্থাভেদে ৪: ২: ১ ও ৩:১.৫:১। এসব নিয়ম মানা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাইবান্ধা সওজের এক ঠিকাদার বলেন, প্রথম স্তরে যে পরিমাণ খোয়া ও বালু দেওয়া হয়েছে, তার অনুপাত ৪০: ৬০। একইভাবে কার্পেটিংয়ের নিচের স্তরে দেওয়া হচ্ছে ৬০: ৪০, নর্দমা নির্মাণে ১০ মিলিমিটার ব্যাসের রড ও সাধারণ সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। রাতে কাজের তদারকি না থাকায় পাথর, বালু ও সিমেন্টের অনুপাতও যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না।