সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:৪৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ে অতীষ্ট হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার জনজীবন। সকাল হতে না হতেই সূর্যের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সময় গড়িয়ে দুপুর আসতে না আসতেই সেই তাপদাহ রীতিমত অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোড শের্ডিং এর কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মধ্যে বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ এর গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে । গ্রাহকদের অভিযোগ দিনে অন্তত ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে ।
শুধু পল্লী বিদ্যুৎ নয় নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকোর গ্রাহকরাও বর্তমানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । গত দু’দিন থেকে শহরের ফিডারগুলোর গ্রাহকরা লোডশেডিংয়ের কারণে বিপাকে পড়েছে । দীর্ঘ সময়ের শাট ডাউনের কারনে বিদ্যুৎ নির্ভর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে । গাইবান্ধা শহরের জেলা পরিষদ মোড়ের ইন্টারনেট সার্ভিসের ব্যবসায়ী শামিম রহমান জানান গত কয়েকদিন দিন হলো দোকানে বিদ্যুৎ থাকছে না ফলে ফটোকপি সহ অনলাইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছি না ।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের আরিফ খাঁ বাসুদেব পুর গ্রামের গরুর খামারী মর্জিনা বেগম জানান আমার খামারে ৮ টি বিদেশি জাতের গরু আছে। এগুলোর জন্য ২৪ ঘন্টা ফ্যানের বাতাস দিতে হয় কিন্তু গত এক মাস ধরে পল্লী বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং এর কারনে গরু গুলো আমার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দিনের মধ্যে তিন চারবার গোসল করাতে হচ্ছে ।
দারিয়াপুর বাজারের নাজনীন বেগম বলেন, ফ্রিজে রাখা মাছ মাংস ঠিকভাবে হিমায়িত হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে ।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা সংস্থা দুইটি ভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছে । পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায় তারা চাহিদামতো গ্রীড স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না । পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ডিস্ট্রিবিউশন লাইনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা ব্যহত হচ্ছে । নেসকো জানায় গ্রীড স্টেশন থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ পেলেও যান্ত্রিক ত্রুটি ও অরক্ষিত বৈদ্যুতিক লাইন কারনে সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয় ।
গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সুত্রে জানা যায়, তারা ৫২ টি ফিডারের মাধ্যমে গাইবান্ধা জেলার ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার গ্রাহককে সেবা দিয়ে আসছে । বিপুল সংখ্যক এসব গ্রাহকের বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটাতে দৈনিক ৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হলেও পল্লী বিদ্যুৎ মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম । ফলে গ্রাহকরা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।
নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি নেসকো সুত্রে জানা যায় তাদের ১৩ টি ফিডারের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ২০ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলেও যান্ত্রিক ত্রুটি ও অরক্ষিত বৈদ্যুতিক লাইনের কারনে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে । তারা জানান বর্তমানে নেসকোর ডিস্ট্রিবিউশন লাইন গুলোর সংস্কার কাজ চলমান, অনেক জায়গায় খুঁটি ও নতুন ভাবে তার লাগানো হচ্ছে এসব কারণে ঐ ফিডারে অনেক সময় শাটডাউন দিয়ে কাজ করা হয় । ফলে ঐসব এলাকায় সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয় ।
গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শেখ মনোয়ার মোর্শেদ জানান, গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দিতে আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি । আমাদের গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেশি। আর ডিস্ট্রিবিউশন লাইন ও সার্ভিস লাইনগুলো অনেক সময় গাছপালার ভেতর দিয়ে টানা হয় । গ্রাহকদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের স্টাফরা গাছের ডাল পরিস্কার করতে গেলে অনেক সময় গ্রাহকরা আমাদের কাজে বাধা দেয় । ফলে সামান্য ঝড় বাতাসে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া আমরা চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি তাই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না । আমরা সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি আশা করছি এর সুফল খুব শীঘ্রই গ্রাহকরা পাবেন ।