শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ বিস্তৃত চরে সবুজ ভুট্রার ক্ষেতের ভেতর উঁকি দিচ্ছে লাল-সবুজ আর কালচে মরিচ। কিষান-কিষানি মরিচ ক্ষেত থেকে বেছে বেছে লাল পাকা মরিচ তুলছেন। তোলার পর রোদে শুকানোর জন্য বালির উপর নেট জালের উপর মরিচগুলো ছড়িয়ে রাখছেন। আর মরিচের সেই লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে সাদা বালুচরে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বালুতে কেউ লাল গালিচা পেতে রেখেছেন।
ফুলছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদে বছরের পর বছর ধরে মরিচ চাষ হচ্ছে। গাইবান্ধার সাত উপজেলায় কমবেশি মরিচ চাষ করলেও উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি আসে এই ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চর থেকে।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর এবং গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন চরে ১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ করা হয়েছে। আর গোটা জেলায় মরিচের চাষ করা হয়েছে ১ হাজার ৯’শ হেক্টর জমিতে। প্রতি বছরের মতো এবারও মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিনে ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম চরের এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নে গিয়ে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, কার্তিক মাসে মরিচের জমি তৈরি করেন তারা। অগ্রহায়ণ মাসে বীজ লাগান। চলতি মার্চ মাসে শুরু হয়েছে মরিচ তোলা। এ সময় কাঁচা মরিচ বিক্রির পর, পাকা মরিচগুলো বালিতে নেট জাল বিছিয়ে তার উপর শুকানো হয়। শুকনো মরিচ সংরক্ষণ করে বছরের যেকোনো সময় বিক্রি করা যায়।
তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য হাটে নিয়ে বিক্রি করতে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়ে তারা গ্রামে আসা ব্যাপারিদের কাছে কমদামে এই মরিচ বিক্রি করেন। এতে করে তাদের খুব বেশি লাভ হয় না।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী গাইবান্ধায় চর রয়েছে ৬৫টির মতো। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদরের মোল্লারচর, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, এরেন্ডাবাড়ির সন্যাসীর চর, আনন্দের চর, ভাটিয়া পাড়া এবং সাঘাটা উপজেলার হলদিয়ার চরসহ ৫০টির বেশি চরে এই মরিচের চাষ বেশি করা হয়।
এসব গ্রামের কৃষকরা জানান, এ উপজেলার চরাঞ্চলে শত বছরের বেশি সময় ধরে মরিচ চাষ করে আসছেন তারা। কম পুঁজিতে বেশি লাভের কারণে চরে মরিচ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একজন কৃষক ৩/৪ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে পারলে, পরিবারের সারা বছরের সব ধরনের খরচের টাকা উঠে যায়। ভাটিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক হাকিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এতো কষ্ট করে আবাদ করি। কিন্তু রাস্তাঘাট না থাকায় সহজে হাটে বিক্রি করতে পারি না।
একই গ্রামের হারুন মিয়া বলেন, মরিচের চাষ করতে খুব বেশি খরচ হয় না। এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদে খরচ হয়েছে ১৪/১৫ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে ৮ মণ। শুকানোর পর প্রায় ৬ মণ হয়েছে প্রতি মণ শুকনো মরিচ ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। সরাসরি বড় কোম্পানিকে দিতে পারলে প্রতি মণ মরিচ ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারতাম।
এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক ওয়াহাব মুন্সি, কৃষাণী কুলসুম বেগম ও রওশন আরা বেগম ক্ষেত থেকে পাকা মরিচ তুলে নেট জালে তা শুকানোর কাজ করছিলেন। অনেকটা আক্ষেপের সুরে তারা বলেন, তারা প্রত্যেকেই বাপ-দাদার আমল থেকে মরিচ চাষ করে আসছেন। গাইবান্ধা জেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় ব্যাপারির কাছে কম দামেই মরিচ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। দীর্ঘ বালু পথ এবং নৌ-পথ পাড়ি দিয়ে জেলার বাজার গুলোতে বিক্রি করতে গেলে সেদিন আর বাড়ি ফেরার উপায় থাকে না। কোন উপায়ন্তর না থাকায় জমিতেই মরিচ শুকিয়ে তা ব্যাপারির কাছেই বিক্রি করছেন বলে তারা জানান।