বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধার পথের বয়াতিরা এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বয়াতিদের দোতারা আর ঢোলের তালে জমছে না গাইবান্ধার হাটবাজার, চায়ের দোকান। নেই আগের মতো শ্রোতা, নেই আয় রোজগার।
করোনার কারণে শ্রোতা না থাকায় আসর জমাতে পারছেন না তারা। বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানও বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি বেসরকারি গান বাজনার আসরগুলো বন্ধ। তাই বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের আয়ের পথ। কমে গেছে রোজগার। কষ্টের শেষ নেই এই সব পথের বয়াতিদের।
গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ীতে কাফি, সন্তোষ, তাজু, সাদা, সাধু, ফজলু, রিজু বয়াতীর মতো অন্তত ১শ জন বয়াতি রয়েছে। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই প্রতিবন্ধী। এদের একমাত্র পেশা পথে পথে গান গাওয়া।
গত রোববার কথা হয় গাইবান্ধা সদর উপজেলার দাড়িয়াপুরের বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তোষ বয়াতির সাথে। তিনি জানালেন, তার ৩ সন্তানসহ ৫ জনের সংসার। দোতরা নিয়ে হাটে বাজারে গানের আসর জমান। এই আসর থেকে মানুষ যা দেয় তাই দিয়ে পরিবারের সবার মুখে তিন বেলা খাবার যোগান হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তার দিন চলছে খেয়ে না খেয়ে।
তিনি বলেন, ভিক্ষাও করতে পারিনা। মানুষের কাছে ধার দেনা আর সুদের উপর টাকা নিয়ে কোনো মতে এক বেলা আধ পেট খেয়ে দিন কাটছে।
অনেকেই পরিবারের ছেলে মেয়ে স্ত্রীসহ সারাদিন গান গেয়ে বেড়ান। এদের প্রত্যেকের পরিবারের লোক সংখ্যাও বেশি। যাদের ভরণপোষণ চলে এই পেশার উপর। এই বয়াতিরা ঢোল দোতারা একতারা দিয়ে মাটি ও মানুষের গান গেয়ে মানুষের মনে আনন্দ দিলেও এখন তাদের মনে আনন্দ নেই। পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন চলছে তাদের।
গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বাদল রায় বলেন, শহরের আশে পাশে বেশ কিছু প্রতিবন্ধি ব্যক্তি আছেন যারা ভিক্ষা করতে পারেন না। তারা হাটে বাজারে ও বিভিন্ন উৎসবে গান গেয়ে যা রোজগার হয় তাই দিয়ে সংসার চালায়। তাদের এখন গান বাজনা বন্ধ হওয়ায় আয়ের পথ বন্ধ। কেউ কেউ সরকারি সহযোগিতা পেলেও অধিকাংশই সাহায্য বঞ্চিত। প্রতিবন্ধী বয়াতিদের আলাদা করে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা দরকার।
গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক প্রমোতোষ সাহা বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও শিল্পকলা একাডেমি থেকে অনেককেই সামান্য আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। তার বাইরেও যেসব বয়াতি বা শিল্পী রয়েছে, তাদের কিছুই দেয়া সম্ভব হয়নি।