রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১২:০১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ ২০১৯ সালের জুলাইয়ের ভয়াবহ বন্যার চিহ্ন গাইবান্ধার মানুষকে আজও কাঁদায়। সাঘাটা উপজেলার ৪টি ও ফুলছড়ি উপজেলার একটি ব্রীজ বন্যায় লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ১ বছরেও সংস্কার করা হয়নি। ভেঙে যাওয়া সড়কগুলো ঠিক না করায় চলতি মাসে টানা বৃষ্টিতে বেড়ে গেছে জেলাবাসীর দুর্ভোগ।
এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙ্গা সেতুগুলোর স্থানে বাঁশ কিংবা কাঠের সাঁকো তৈরি করে কোনোমতে যাতায়াত করছে। কিন্তু ওই সাঁকোতে ভরসা নেই তাদের। প্রতিদিন হাজারও মানুষের যাতায়াতের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাঁকোগুলো। দুই উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানালেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্রীজ কালভার্টগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিকে ভয়াবহ বন্যায় সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া-রামনগর-গোন্দিগঞ্জ সড়কটির ওপর নির্মিত তিনটি সেতু বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে ভেঙে যায়। ফলে এই তিনটি স্থানে কাঠ বা বাঁশের সাঁকো দেয়া হলেও সাঁকোগুলো দুর্বল। ফলে হেঁটেচলা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করে না।
সাঘাটা উপজেলার বাটি গ্রাম, পশ্চিম রাঘরপুর, রামনগর, দলদলিয়া, ময়মন্তপুর, মানিকগঞ্জ, বুরুঙ্গী, কানিপাড়া ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ, তেতুলতলি, সোনাইডাঙ্গাসহ ২০টি গ্রামের কাঁচা-পাকা সড়ক ২০১৯ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে গেছে। এসব সড়কের কাঁচা রাস্তাগুলোর কিছু অংশ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কাবিটা-কাবিখার প্রকল্প দিয়ে মেরামত করলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি পাকা সড়ক ও ব্রিজগুলো।
সাঘাটা উপজেলার গুরত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে কাঠের ব্রীজ গত এক বছরের একমাত্র ভরসা। এই ব্রীজের উপর দিয়ে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও ভারী যানবাহন চলে না। বন্যায় ভেঙে যাওয়া ব্রীজগুলো বন্যা-পরবর্তী সময়ে মেরামতের আশ্বাস দেয়া হলেও প্রায় এক বছরেও সংস্কার করা হয়নি। ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের।
সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়রের সাবেক ইউপি সদস্য ফরমান আলী জানান, বন্যা পরবর্তীতে ব্রিজ গুলো সংস্কার করা হয়নি। পাশাপাশি সড়ক পারাপারে রয়েছে বাঁশের সাঁকো। সাঁকোগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পরাপার হয়। যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার ঘটাতে পারে।
অপরদিকে, গত বছর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বন্যার পানির স্রোতে ফুলছড়ি উপজেলার কেতকিরহাট বাজারে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে গাইবান্ধা-কঞ্চিপাড়া-কেতকিরহাট পাকা সড়কের কেতকিরহাট বাজারে প্রায় ৫০ ফুট অংশ ভেঙে যায়। পরে ওই সড়কে প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করে স্থানীয়রা।
এরপর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আর কোনো মেরামত না করায় সাঁকোটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই সাঁকোর ওপর দিয়ে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, ফজলুপুর ও উড়িয়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ জেলা ও উপজেলা শহরে যাতায়াত করে থাকেন।
ফুলছড়ি উপজেলার উত্তর উড়িয়া গ্রামের কৃষক আহম্মেদ হোসেন বলেন, জমিতে উৎপাদিত ধান, গম ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল ও সবজি বাজারে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু সাঁকোটি বিধ্বস্ত হওয়ায় ৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে গাইবান্ধা জেলা শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। পরিবহন খরচ বেশি হচ্ছে। অথচ কাঠের সাঁকোটির স্থলে মাটি দিয়ে ভরাট করা হলে এই সমস্যার সৃষ্টি হত না।