রবিবার, ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

উপযুক্ত পাটের দাম না পাওয়ায় গাইবান্ধার পাট চাষিরা হতাশ

উপযুক্ত পাটের দাম না পাওয়ায় গাইবান্ধার পাট চাষিরা হতাশ

স্টাফ রিপোর্টারঃ পরিমিত বৃষ্টি না হওয়ায় গাইবান্ধায় এ বছর পাটের ফলন কম হয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় চাষীদের। এসবের পর উৎপাদিত পাট বিক্রি করতে গিয়ে আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন না কৃষক। ফলে সোনালি আঁশ উৎপাদন করে হতাশায় পড়েছেন কৃষক। উপযুক্ত দাম না পাওয়ার জন্য সরকারের সদিচ্ছা এবং সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন চাষিরা।
গাইবান্ধার একমাত্র পাটের হাট কামারজানি বন্দর। সপ্তাহের শুক্রবার ও সোমবার এই হাট বসে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের পাটচাষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পাট কেনা-বেচা করেন এই হাটে।
গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে কামারজানি বন্দরে গিয়ে দেখা যায়, হাটের এক পাশে পাট নিয়ে বসে আছেন এক ব্যক্তি। সত্তর ছুঁই ছুঁই ওই ব্যক্তির নাম আব্দুস সাত্তার। মোল্লারচর থেকে পাট নিয়ে আসছেন এই বর্গাচাষি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই বিঘা জমিতে হাল, বীজ, সার ও শ্রমিকের মজুরি সব মিলিয়ে পাট চাষে খরচ হয়েছে ২২ হাজার টাকা। আর পাট হয়েছে ৯ মণ। বাজার অনুযায়ী এর দাম এখন ১৮ হাজার টাকা। আমার লোকসান হলো চার হাজার টাকা। এই টাকা আমি কোথা থেকে পূরণ করব।
তিনি আরও বলেন, আমরা চরের মানুষ। চরে এ মৌসুমে পাট ছাড়া অন্যকিছু আবাদ হয় না, আর সেই পাট চাষ করে আমরা উল্টো লোকসান গুনছি। তাহলে পরিবার নিয়ে বাঁচব কীভাবে? পাট চাষ করে যে ক্ষতি হলো এটা পূরণ করব কীভাবে?
হাটে পাট বিক্রি করতে আসা আরও কয়েকজন পাট চাষির সঙ্গে কথা হলো। তাদের সবার অভিজ্ঞতা একই। চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। তাদের দাবি, কৃষক বাঁচাতে পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের মনিটরিং করা উচিত। যাতে সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট ক্রয় করে।
কামারজানি হাটের পাট ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, নানা কারণে এ বছর বিদেশে পাট রপ্তানি হচ্ছে না। ফলে পাটের বড় পাইকাররা হাট থেকে এখনও পাট কেনা শুরু করেননি। বড় পাইকাররা হাটে আসছেন না, তাই স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাট কিনে গুদামজাত করে রাখছেন। তবে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা পাট তারা জুটমিলে বিক্রি করতে পারবেন কি না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গাইবান্ধা সদরের কামারজানি, দারিয়াপুর এবং ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাটচাষিদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। চাষিরা জানান, এ বছর খরার কারণে খালবিলে পানি না থাকায় তারা সময়মতো পাট জাগ দিতে পারেননি। কোনো কোনো এলাকায় সেচের পানিতে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ হয়েছে তাদের।
ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের পাটচাষি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান বলেন, আমার ৪২ শতাংশ জমি থেকে পাট ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে পাট বিক্রি করেছি ২০ হাজার টাকা। এ বছর পাটচাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আমি তো সাধারণ কৃষক। এই ৪ হাজার টাকা আমি কোথায় পাব। এ অবস্থায় পাট চাষের আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেলেছি।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, এ বছর কৃষক পাটের ভালো ফলন পেলেও বাজার দর নিয়ে হতাশায় আছেন। উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলে অনেক কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ফলে পাট চাষ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার প্রায় ১৫ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে পাট চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৮২ হেক্টর কম।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com