রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
শিক্ষা ব্যাবস্থা উন্নত আধুনিক ও শিক্ষার মান উন্নয়নের কৃতিত্ব একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর -মাহমুদ হাসান রিপন এমপি সুন্দরগঞ্জে সাব প্রাণী সম্পদ কল্যাণ কেন্দ্রের বেহালদশাঃ গ্রাম গঞ্জে পশু ডাক্তারের নামে হাতুড়ে ডাক্তারের ছড়াছড়ি গাইবান্ধায় আওয়ামীলীগের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চ উদযাপন সাঘাটায় রেকর্ডভুক্ত জমিতে ব্রীজ নিমার্ণ কাজে বাধাঁ প্রদান করায় ঠিকাদার কর্তৃক থানায় অভিযোগ কলেজপাড়ায় পৌর নাগরিকদের সভা নলডাঙ্গায় নবীন ও বসন্ত বরণ অনুষ্ঠান গাইবান্ধায় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মতবিনিময় সভা গাইবান্ধায় মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন গোবিন্দগঞ্জে সরকারি বই বিক্রিকালে জনতার হাতে শিক্ষক-কর্মচারী আটক দারিয়াপুরে বাম জোটের সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গাইবান্ধায় যাযাবর সাপুড়ে বহর যারা নিজস্ব ঐতিহ্যকে লালন করে অব্যাহত রেখেছে জীবন জীবিকা

গাইবান্ধায় যাযাবর সাপুড়ে বহর যারা নিজস্ব ঐতিহ্যকে লালন করে অব্যাহত রেখেছে জীবন জীবিকা

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনের রেল লাইনের পাশে খোলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছে যাযাবর সাপুড়ে বহর। সাপুড়ে সম্প্রদায়টি দীর্ঘকাল যাবৎ নিজস্ব ঐতিহ্যকে লালন করে অব্যাহত রেখেছে তাদের জীবন জীবিকা।
এই যাযাবর সাপুড়ে পরিবারের আদি নিবাস ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামে। ওখানে তাদের নিজস্ব বসতবাড়ি এবং আত্মীয়-স্বজন থাকলেও তারা সারাদেশ ঘুরে ঘুরে এভাবে অস্থায়ী নিবাস গড়ে তুলে তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। কোথাও বসতি গেড়ে এই সাপুড়ে বহর এক সপ্তাহ থেকে দু’সপ্তাহের বেশী অবস্থান করে না। এভাবেই তারা ঘুরে বেড়ায় সারাটা জীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বহরে রয়েছে ৭টি পরিবারের অস্থায়ী ছোট ছোট বাঁশের খুঁটি পুঁতে দুপাশে খোলা পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছোট ছোট ছোট ডেরা। এসব ডেরাতেই অবস্থান করছে ৭টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২৩ জন মানুষ। এই সাপুড়ে বহরের সর্দার হচ্ছে আব্দুল মান্নান। তার ডেরায় রয়েছে সৌর বিদ্যুৎ চালিত ফ্যান ও লাইট। তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, গাইবান্ধায় তাদের অবস্থান ১৫ দিন। তারপর তারা চলে যাবে অন্য কোথাও। তিনি জানালেন, বেদে সম্প্রদায় থেকে তারা আলাদা। বেদেরা নৌকাতেই চলাচল করে। কিন্তু তারা ট্রেনে, বাসে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় যায়। প্রতি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন এলাকায় এভাবে অস্থায়ী বসতি গেড়ে তারা সাপ, বানর, বেজির খেলা দেখায় এবং দাঁতের পোকা নিধন, বাতের ব্যথা, সাপের বিষ নামানোসহ বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের তাবিজ কবজ বিক্রি করে থাকে। এগুলোই তাদের আদি পেশা। যার উপর নির্ভর করে তাদের সংসার চলে।
সাধারণত পুরুষ এবং শিশুরা ডেরায় অবস্থান করে আর নারীরা ডেরা সংলগ্ন অস্থায়ী চুলায় রান্নাবান্না সেরে ঝোলা কাঁধে এবং বেতের ধামা মাথায় করে গ্রামে গ্রামে ঘুরে খেলা দেখায় এবং ওই সমস্ত তাবিজ কবজ বিক্রি করে। আবার নির্ধারিত সময় বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে তারা ডেরায় ফিরে আসে। দিনের বেলাতেই রান্নাবান্না সেরে তারা সন্ধ্যার সাথে সাথেই ডেরায় অবস্থান নেয়। এভাবেই চলে যাযাবর সাপুড়ে সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবন। বংশ পরম্পরায় তাদের সন্তানেরা এই পেশা আঁকড়ে থাকে।
এদের মধ্যে একটি অদ্ভুত নিয়ম চালু রয়েছে। বহরের কোন নারী যদি অসুস্থ হয় তবে সেদিন তার সেবায় সব নারীরা ডেরায় অবস্থান করবে, আর পুরুষরা যাবে কাজে। এছাড়া মূলত নারীরাই ঘুরে ঘুরে তাদের পেশায় নিয়োজিত থাকে। রাত ৮টার পরে সর্দারের অনুমতি ছাড়া কেউ ডেরার বাইরে অবস্থান করতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে এই সাপুড়ে সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা পরিচালিত হয় মাতৃতান্ত্রিক নিয়মে।
জানা গেছে, এই সাপুড়ে সম্প্রদায়ের বয়স্ক মানুষ এবং বিবাহযোগ্য যুবক-যুবতীরা সাধারণত বাড়িতেই অবস্থান করে। তাদের প্রথা অনুযায়ী এই সম্প্রদায়ের মাতব্বরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি কোরবানী ঈদের পর থেকে পরবর্তী কোরবানী ঈদ পর্যন্ত তার নির্ধারিত একটি করে দল এক বছর জুড়ে এভাবে ঘুরে ঘুরে অস্থায়ী নিবাস গড়ে তুলে যাযাবর জীবন যাপন করে আবার ফিরে আসে নিজ নিবাস কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর গ্রামে।

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com